Wednesday, October 10, 2018




♥ আমার ভালবাসা বুঝলেনা ♥

আরিফ জামান

(পার্ট-৩০)


রোজা রেখে দীর্ঘ সময় বাইক চালানো কি যে কস্টকর সেটা একমাত্র যে চালিয়েছে সেই জানেএকে-তো মাথা ফাটা রোদ, তার মধ্যে রোজা, সবকিছু মিলিয়ে যায় যায় অবস্থামাঝখানে অবশ্য তিন বার বিরতি দিয়েছে কিন্তু শরীরে পানি না যাওয়ার কারণে মোটামুটি ভালোই সমস্যা হয়েছেরামিশা অবশ্য কয়েকবার আথনুককে বলেছিলো রোজা ভাঙতে কিন্তু আথনুক মোটেও রাজি হয় নাইআথনুক যখন থেকে বুঝতে শিখে তখন থেকে সবগুলো রোজা রেখে এসেছেঅসুস্থ না হলে সে কখনোই রোজা ভাঙে নাইআথনুক আজকে যখন দীর্ঘ সময় ধরে বাইক চালাচ্ছিলো তখন বারবার তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু! তারপরও সে রোজা ভাঙতে রাজি হয় নাই

কথায় আছে ভালোবাসার মানুষটির সাথে যদি অনেক দিন পরে দেখা হয় তাহলে খুশিতে মনের অজান্তে চোখের কোনে জল আসেআথনুক এর বেলাও তাই হলো, দীর্ঘ দুই মাস পর ছায়ার সাথে আথনুক এর দেখা হলোআথনুক আবেগের কারণে মনের অজান্তে কখন যে কেঁদে ফেলেছে সে নিজেও জানে নাআথনুক ছায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে ছায়াকে দেখে অবাক হয়ে গেলছায়া আগের চেয়ে অনেক শুকিয়ে গিয়েছে শরীর সাস্থ অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছেছায়াকে দেখে ডায়রিয়া রোগীর মতো মনে হচ্ছেআথনুক একটা জিনিস বুঝতে পারলো না ছায়ার হাতে মেহেদি দেওয়া নাই কেন! আথনুক এতদিন জেনে এসেছে মেয়েদের বিয়ে হলে হাতে মেহেদি দেই কিন্তু ছায়ার হাতে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে নাবাসার সবাই যখন রামিশার সাথে গল্প করতে ব্যস্ত আথনুক তখন লম্বা করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে ছায়াকে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছো? ছায়া মাথা নিচু করে মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল এই তো আছিএরকম রোগা হয়ে গিয়েছো কেন! ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করো না ? ছায়া আবারো মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল, রোজা রেখেছি তাই এরকম শুকনো মনে হচ্ছেরোজা রাখলে বুঝি মানুষ শুকিয়ে যায় ? আথনুক ছায়াকে যেভাবে পেচিয়ে ধরেছে তাতে ছায়ার উত্তর দেয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো তাই সে কথা ঘুরিয়ে আধার মুখে নকল হাসি দিয়ে বলল এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলবে ? ভিতরে এসে ফ্রেশ হয়ে ইফতার করো তারপর না হয় বলব


ওদিক থেকে রবিন চেচিয়ে ছায়াকে বললো “এখানে দাঁড়িয়ে কথা না বলে ওনাদের ভিতরে নিয়ে যাও ইফতারের সময় হয়ে এসেছে” ছায়া আথনুককে বলল ভিতরে চলোআথনুক বাসার ভিতর প্রবেশ করে অভিবাক হয়ে গেলো রবিনের বাসাটা বেশ বড়, বাসার ভেতরটা দেখে মনে হচ্ছে দেশের বাহিরে থেকে রবিন ভালোই টাকা পয়সা ইনকাম করেছেটাকা পয়সা ইনকাম না করলে গ্রামের মধ্যে ফাউন্ডেশন দিয়ে তিন তলা বাড়ি করতে পারে! বাড়ির ভেতরটা বেশ রাজ প্রাসাদের মতো বানিয়েছেনিচ তলা থেকে দোতলা পর্যন্ত দুদিক থেকে দুটো সিঁড়ি উঠে গিয়েছেবাসার মাঝখানে খোলা জায়গাবাসার ভেতরটা দেখে বেশ ভালোই লাগছেছায়া আথনুককে নিয়ে সোজা সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে সিঙ্গেল সিঁড়ি বেয়ে তিন তলায় গেস্ট রুম দেখিয়ে দিয়ে বলল এইটা তোমার রুমআর রামিশা আমার সাথে আমার রুমে থাকবেছায়ার এই কথায় আথনুক একটু চমকে উঠলোআথনুক ছায়াকে প্রশ্ন করলো তোমার রুমে থাকবে মানে? হ্যা আমার রুমে থাকবে, কেন! রামিশা আমার রুমে থাকলে কোনো সমস্যা হবে ? না ঠিক তা নয়! তাহলে কি? মানে রামিশা তোমার সাথে থাকলে রবিন কোথায় ঘুমাবে ? এতদিন যে রুমে ঘুমিয়েছে সেই রুমে ঘুমাবেমানে কি ? মানে কিছু না, ইফতারের সময় হয়ে এসেছে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো সবার সাথে ইফতার করবে

ছায়া দরজা লাগিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলআথনুক বিছানায় বসে মনে মনে তার নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করলোকিছুক্ষন আগে ছায়া যে কথা গুলো বলে গেলো সেটাতে সে কি বোঝাতে চেয়েছে! আমি যতটুকু জানি ছায়া এবং রবিনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথাআর যদি বিয়ে হয়ে যায় তাহলে দুজন আলাদা রুমে থাকে কেন! কিন্তু ছায়া যেভাবে বলে গেলো রামিশা তার সাথে তার রুমে তার সাথে থাকবে! এর মানে কি! তার মানে ছায়া এবং রবিনের বিয়ে এখনো হয় নাই! আথনুক বিছানায় বসে নিজেকে প্রশ্ন করেছে ঠিকই কিন্তু এর উত্তর খুঁজে পাইনিআথনুক ফ্রেশ হয়ে হালকা হলুদ পাঞ্জাবী পরে নিচে নামলোডাইনিং টেবিলে বসে থাকা সবাই আথনুককে দেখে হা করে তাকিয়ে থাকলহলুদ পাঞ্জাবীতে আথনুককে ভালোই দেখাচ্ছেইফতার এর টেবিলে হরেক রকমের খাবারের আয়োজন করা হয়েছেইফতার এর টেবিলে বিশেষ করে হরেক রকমের দেশি ফল মূল রেখেছেআথনুক একটা জিনিস লক্ষ করলো তার পছন্দের খাবার গুলো এখানে রয়েছেযদিও ইফতার কোনটার থেকে কোনটা কম নয় কিন্তু তারপরও এসব খাবারের মধ্যে আথনুক এর সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে কাঁচা আমের “জুস” আথনুক কাঁচা আমের জুস পছন্দ করে সেটা একমাত্র ছায়া জানেকারণ ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে ছায়া সহ অন্যান্য বন্ধু বান্ধবীরা সবাই যখন লাচ্ছির অর্ডার দিতো আথনুক তখন বলে দিতো সবার জন্য লাচ্ছি আর আমার জন্য কাঁচা আমের জুস

আথনুক ইফতার শেষ করে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই তার নাকে বেলি ফুলের ঘ্রাণ এসে লাগলো আথনুক তার রোমে না ঢুকে সোজা ছাদের দিকে চলে গেলআথনুক ছাদে উঠে অবাক হয়ে গেল ছাদের ঠিক সামনের দিকে সাদা একটি টবে ঝোপ হয়ে বেলি ফুল ফুটে রয়েছে ঠিক তার পাশে চারটি চেয়ার এবং একটি গোল টেবিল রয়েছেছাদের উপর অনেক রকমের ফুলের গাছ রয়েছেছাদের চার কোনায় চারটি সাদা লাইট লাগিয়েলাইটের আলোতে ছাদটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছেছাদটা আথনুক এর এতই পছন্দ হয়েছে যে সে লোভ সামলাতে পারলনা তাই সে পা টিপে টিপে গিয়ে চেয়ারের উপর বসে পড়লমজার বিষয় হলো আথনুক যেখানে বসে ছিল সেখান থেকে ছায়ার রুম দেখা যাচ্ছিলছায়ার রুমের পর্দা ক্লোজ করার কারণে ছায়া এবং রামিশা দুজনকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিলআথনুক তাদের দুজনকে দেখেও না দেখার ভান করে চুপ করে বসে রইলোছাদের উপর বেলি ফুলের ঘ্রাণ, ঠান্ডা বাতাস, আর ঝি ঝি পোকার গান, এই সব কিছু মিলিয়ে চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় কখন যেন আথনুক এর চোখ লেগে এসেছেহঠাৎ পিছন থেকে একটি হাত আথনুক এর মাথার উপর হাত বুলাতে লাগলে আথনুক লাফ দিয়ে চমকে উঠে বলল কে?।।

খুব শীগ্রই এই গল্পের (পার্ট-৩১) পোস্ট করা হবেএবং পার্ট-৩১তে বিশেষআকর্শন থাকবে।


Coming soon will be posted (Part-31) of this story.



নোট: গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ!!


Saturday, September 29, 2018



আমার ভালবাসা বুঝলেনা

আরিফ জামান


(পার্ট-২৯
)


আথনু এবং রামিশা তারা দুজনে ছায়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু মাঝ পথে রাত হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের দুজনকে করিম চাচার বাসায় উঠতে হয়েছেকরিম চাচা আথনু এবং রামিশাকে স্বামী স্ত্রী হিসেবেই জানেনআথনু এবং রামিশা যদিও দুজন স্বামী স্ত্রী না তারপরও বিপদ কাটানোর জন্য তাদের দুজনকে অভিনয় করতে হচ্ছেঅপরিচিত মানুষ হিসাবে করিম চাচা তাদের দুজনকে অনেক সাহায্য করেছেনআথনু এবং রামিশা করিম চাচার দোকানে গিয়ে দাড়িয়ে ছিলো তখন দোকানের সামনে তিন চার জন বয়স্ক ভদ্রলোক ছিলো তাদের মধ্যে একমাত্র করিম চাচা আথনু এবং রামিশাকে বাসায় নিয়ে এসেছেনকরিম চাচা গ্রামের মানুষ হলেও শহরের মানুষকে কিভাবে আপ্যায়ন করতে হয় সেটা তিনি জানেনকরিম চাচা খুব ভালো মানুষ

আথনু বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখলো রামিশা ঘুম থেকে উঠে বিছানার উপর বসে আছেআথনু রামিশাকে জিজ্ঞেস করলো কি! ঘুম ভেঙ্গেছে ? তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও বের হতে হবেরামিশা কিছু না বলে যখন বিছানা থেকে নামতে গেলো তখন নুপুরের আওয়াজ শুনে তার চোখ পায়ের দিকে গেলদুই পায়ে নুপুর দেখে অবাক হয়ে গেলরামিশা কিছু বলার আগেই আথনু বলল এটা ছায়ার জন্য বানিয়ে ছিলাম ভেবেছিলাম ছায়াকে দিবো কিন্তু ছায়া অন্য কারো হয়ে গিয়েছে তাই ভাবলাম ছায়া যখন নাই তখন এটা ব্যাগে ফেলে রেখে লাভ কি? তাই তোমার পায়ে পরিয়ে দিয়েছিকোনো ভুল করেছি ? কিন্তু আমরাতো ছায়ার কাছে যাচ্ছি তখন তাকে দিয়ে দিলে হতো না ? না, কেন ? যে আমার কথা বিন্দু মাত্র চিন্তা না করে অন্যের সাথে বিয়ের পিড়িতে বসেছে তাকে উপহার দিয়ে আমি আমার ভালবাসাকে অপমান করতে চাই নানুপুর ভালো না লাগলে আমাকে দিয়ে দাও, নুপুর জোড়া রামিশার ভীষণ পছন্দ হয়েছে তাই সে বলল অনেক সুন্দর নুপুর আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছেযদি তাই হয় তাহলে পায়ে থেকে খোলার প্রয়োজন নেই পায়ে পরে থাকোতাছাড়া এই নুপুর জোড়া তোমার পায়ে ভীষণ মানিয়েছেরামিশা আথনুককে ধন্যবাদ দিয়ে বাথরুমে চলে গেল


ঠিক সকাল নয়টার সময় দুজনে তৈরী হয়ে ঘর থেকে বের হলোরামিশা এবং আথনুককে বের হতে দেখে করিম চাচা এগিয়ে আসলোকরিম চাচা আথনুককে জিজ্ঞেস করলো বাবাজি এতো তাড়াতাড়ি বের হয়েছেন কেন? আরও দুই দিন আমার বাসায় থেকে তারপর না হয় যাবেননা চাচা, আজকে আর না, অন্য কোনো এক সময় এসে থেকে যাবো আজকের মতো আমাদেরকে বিদায় দিনবাবাজি আমি তেমন কোনো খেদমত করতে পারিনাই আশা করি মনে কিছু নিবেন নাচাচা আপনি আমাদের জন্য যা করেছেন এতেই আমরা ভীষণ খুশি হয়েছিআপনার এই উপকারের কথা আমরা সারাজীবন মনে রাখবোআথনু একটা কাগজে তার বাবার নাম ঠিকানা লিখে করিম সাহেবের হাতে দিলো এবং বলল চাচা আপনি কখনো ঢাকায় আসলে আমার বাসায় অবশ্যই আসবেনআপনি পরিবারকে নিয়ে আমার বাসায় আসলে আমি ভীষণ খুশি হবোআচ্ছা বাবাজি আসবোআথনু এবং রামিশা একে একে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবার তাদের গন্তব্য স্থানের উদ্দেশে রওয়ানা দিলো

দীর্ঘ চার ঘন্টা বাইক চালানোর পর আথনু এর বাইক ছায়ার বাসার কাছে একটা বাজারে এসে দাড়ালোআথনুক একটা দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে এক বয়স্ক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলো আংকেল এখানে রবিনের বাসা কোথায়? ওই সামনে গিয়ে ডানে মোড় ঘুরে প্রথম বাড়ির পরেই যে বিশাল বিল্ডিং বাড়ি ওটাই রবিনের বাড়ি, কিন্তু! আপনি কে? আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না বাবাজি! আমি রবিনের বন্ধু ঢাকা থেকে এসেছি, আপনি কি রবিনের বিয়েতে এসেছেন? জি! কিন্তু আংকেল আপনি কে? আমি রবিনের চাচা, বাজারে এসেছি, ও আচ্ছা! আংকেল তাহলে আমরা যাই? ঠিক আছে বাবাজি আপনারা যান আমি ওরে ফোন করে বাসার সামনে আসতে বলছিঠিক আছে আংকেলআথনু এর বাইক ছায়ার বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই রবিন এবং তার পরিবারের সবাই এসে আথনু এবং রামিশাকে স্বাগতম জানালোরবিন শুভেচ্ছা বিনিময় করে আথনুককে জিজ্ঞেস করল আমি যদি ভুল না করি তাহলে আপনি আথনুক? জি আমি আথনুক, আর উনি কে? ও রামিশা, আমার বন্ধু, আপনার কথা আমি ছায়ার মুখে অনেক শুনেছিআথনু এবং রামিশার সাথে একে একে বাসার সবাই শুভেচ্ছা বিনিময় করলো কিন্তু ছায়া আর তুষার তারা কেউ তার সামনে আসলোনারবিন আথনু এবং রামিশাকে নিয়ে যখন বাসার গেটে প্রবেশ করছিল তখন হঠাৎ ছায়া কোথা থেকে যেন দৌড়ে  হাঁপিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়ালো।।


খুব শীগ্রই এই গল্পের (পার্ট-৩০) পোস্ট করা হবে এবং পার্ট-৩০ তে বিশেষ আকর্শন থাকবে


Coming soon will be posted (Part-30) of this story.


নোট: গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ!!