♥ আমার ভালবাসা বুঝলেনা ♥
আরিফ জামান
(পার্ট-৩০)
রোজা রেখে দীর্ঘ সময় বাইক চালানো কি যে কস্টকর সেটা একমাত্র যে চালিয়েছে সেই জানে। একে-তো
মাথা ফাটা রোদ, তার মধ্যে রোজা, সবকিছু মিলিয়ে যায় যায় অবস্থা। মাঝখানে অবশ্য তিন
বার বিরতি দিয়েছে
কিন্তু শরীরে পানি না যাওয়ার কারণে মোটামুটি ভালোই সমস্যা হয়েছে। রামিশা
অবশ্য কয়েকবার আথনুককে
বলেছিলো রোজা ভাঙতে কিন্তু আথনুক মোটেও রাজি হয় নাই।
আথনুক
যখন থেকে বুঝতে শিখে তখন থেকে সবগুলো রোজা রেখে এসেছে। অসুস্থ না হলে সে কখনোই রোজা ভাঙে নাই। আথনুক আজকে যখন দীর্ঘ সময় ধরে বাইক চালাচ্ছিলো তখন বারবার তার গলা
শুকিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু! তারপরও সে রোজা ভাঙতে রাজি হয় নাই।
কথায় আছে ভালোবাসার মানুষটির সাথে যদি অনেক দিন পরে দেখা হয় তাহলে খুশিতে মনের অজান্তে চোখের কোনে জল আসে। আথনুক এর বেলাও তাই হলো, দীর্ঘ দুই মাস পর ছায়ার সাথে আথনুক এর দেখা হলো। আথনুক আবেগের কারণে মনের অজান্তে কখন যে কেঁদে ফেলেছে সে নিজেও
জানে না। আথনুক ছায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে ছায়াকে দেখে
অবাক হয়ে গেল। ছায়া আগের চেয়ে অনেক শুকিয়ে গিয়েছে শরীর সাস্থ অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছে। ছায়াকে দেখে ডায়রিয়া রোগীর মতো মনে হচ্ছে। আথনুক একটা জিনিস বুঝতে পারলো না ছায়ার হাতে মেহেদি দেওয়া নাই
কেন! আথনুক
এতদিন জেনে এসেছে মেয়েদের বিয়ে হলে হাতে মেহেদি দেই কিন্তু ছায়ার হাতে তেমন কিছু দেখা
যাচ্ছে না। বাসার সবাই যখন
রামিশার সাথে গল্প করতে ব্যস্ত
আথনুক
তখন লম্বা করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে ছায়াকে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছো? ছায়া মাথা নিচু
করে মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল এই তো আছি।
এরকম রোগা হয়ে গিয়েছো কেন! ঠিকমত
খাওয়া দাওয়া করো না
? ছায়া আবারো মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল, রোজা রেখেছি তাই এরকম শুকনো মনে হচ্ছে। রোজা রাখলে বুঝি মানুষ শুকিয়ে যায়
? আথনুক ছায়াকে যেভাবে পেচিয়ে ধরেছে তাতে ছায়ার
উত্তর দেয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো তাই সে কথা ঘুরিয়ে আধার মুখে নকল হাসি দিয়ে বলল এখানে
দাঁড়িয়ে কথা বলবে ? ভিতরে এসে ফ্রেশ হয়ে ইফতার করো তারপর না হয় বলব।
ওদিক থেকে রবিন
চেচিয়ে ছায়াকে বললো “এখানে দাঁড়িয়ে কথা না বলে ওনাদের ভিতরে নিয়ে যাও ইফতারের সময় হয়ে
এসেছে” ছায়া আথনুককে
বলল ভিতরে চলো। আথনুক বাসার ভিতর প্রবেশ করে অভিবাক হয়ে গেলো।
রবিনের বাসাটা বেশ বড়, বাসার
ভেতরটা দেখে মনে হচ্ছে দেশের বাহিরে থেকে
রবিন ভালোই টাকা পয়সা
ইনকাম করেছে। টাকা পয়সা
ইনকাম না করলে গ্রামের মধ্যে ফাউন্ডেশন দিয়ে তিন
তলা বাড়ি করতে পারে!
বাড়ির ভেতরটা বেশ রাজ প্রাসাদের মতো বানিয়েছে। নিচ তলা থেকে দোতলা
পর্যন্ত দুদিক থেকে দুটো সিঁড়ি উঠে গিয়েছে। বাসার মাঝখানে খোলা জায়গা। বাসার ভেতরটা দেখে বেশ ভালোই লাগছে। ছায়া
আথনুককে
নিয়ে সোজা সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে সিঙ্গেল সিঁড়ি বেয়ে তিন তলায় গেস্ট রুম দেখিয়ে দিয়ে বলল
এইটা তোমার রুম। আর রামিশা আমার সাথে আমার রুমে থাকবে। ছায়ার এই কথায়
আথনুক
একটু চমকে উঠলো। আথনুক ছায়াকে প্রশ্ন করলো তোমার রুমে থাকবে
মানে? হ্যা আমার রুমে থাকবে, কেন! রামিশা আমার রুমে থাকলে কোনো সমস্যা হবে ? না ঠিক
তা নয়! তাহলে কি? মানে রামিশা তোমার সাথে থাকলে রবিন কোথায় ঘুমাবে ? এতদিন যে রুমে
ঘুমিয়েছে সেই রুমে ঘুমাবে। মানে কি ? মানে কিছু না, ইফতারের সময় হয়ে এসেছে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো সবার সাথে ইফতার করবে।
ছায়া দরজা লাগিয়ে
দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আথনুক বিছানায় বসে মনে মনে তার নিজের প্রশ্নের
উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করলো।
কিছুক্ষন আগে ছায়া যে কথা গুলো বলে গেলো সেটাতে সে কি বোঝাতে চেয়েছে!
আমি যতটুকু জানি ছায়া এবং রবিনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা। আর যদি বিয়ে হয়ে যায় তাহলে দুজন আলাদা রুমে থাকে কেন! কিন্তু ছায়া যেভাবে বলে গেলো
রামিশা তার সাথে তার রুমে তার সাথে থাকবে! এর মানে কি! তার মানে ছায়া এবং রবিনের বিয়ে
এখনো হয় নাই! আথনুক
বিছানায় বসে নিজেকে প্রশ্ন করেছে ঠিকই কিন্তু এর উত্তর খুঁজে পাইনি। আথনুক ফ্রেশ হয়ে হালকা হলুদ পাঞ্জাবী পরে নিচে নামলো। ডাইনিং টেবিলে বসে থাকা সবাই
আথনুককে
দেখে হা করে তাকিয়ে থাকল। হলুদ পাঞ্জাবীতে
আথনুককে
ভালোই দেখাচ্ছে। ইফতার এর টেবিলে হরেক রকমের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। ইফতার এর
টেবিলে বিশেষ করে হরেক রকমের দেশি ফল মূল রেখেছে। আথনুক একটা জিনিস লক্ষ করলো তার পছন্দের খাবার গুলো এখানে রয়েছে। যদিও ইফতার কোনটার থেকে কোনটা কম নয় কিন্তু তারপরও
এসব খাবারের মধ্যে আথনুক এর সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে কাঁচা আমের “জুস” আথনুক কাঁচা আমের জুস পছন্দ করে সেটা একমাত্র
ছায়া জানে। কারণ ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে ছায়া সহ
অন্যান্য বন্ধু বান্ধবীরা সবাই যখন লাচ্ছির অর্ডার দিতো আথনুক তখন বলে দিতো সবার জন্য লাচ্ছি আর আমার
জন্য কাঁচা আমের জুস।
আথনুক
ইফতার শেষ করে সিঁড়ি
দিয়ে উপরে উঠতেই তার নাকে বেলি ফুলের ঘ্রাণ এসে লাগলো।
আথনুক
তার রোমে না ঢুকে সোজা ছাদের দিকে চলে গেল।
আথনুক
ছাদে উঠে অবাক হয়ে গেল। ছাদের ঠিক সামনের
দিকে সাদা একটি টবে ঝোপ হয়ে বেলি ফুল ফুটে রয়েছে। ঠিক তার
পাশে চারটি চেয়ার এবং একটি গোল
টেবিল রয়েছে। ছাদের উপর অনেক রকমের ফুলের গাছ রয়েছে। ছাদের চার কোনায় চারটি সাদা লাইট লাগিয়ে। লাইটের আলোতে ছাদটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ছাদটা
আথনুক
এর এতই পছন্দ হয়েছে যে সে লোভ সামলাতে পারলনা তাই সে পা টিপে টিপে গিয়ে চেয়ারের উপর
বসে পড়ল। মজার বিষয় হলো
আথনুক
যেখানে বসে ছিল সেখান থেকে ছায়ার রুম দেখা যাচ্ছিল। ছায়ার রুমের পর্দা ক্লোজ করার কারণে
ছায়া এবং রামিশা দুজনকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। আথনুক তাদের দুজনকে দেখেও না দেখার ভান করে চুপ করে বসে রইলো। ছাদের উপর বেলি ফুলের ঘ্রাণ, ঠান্ডা বাতাস, আর ঝি ঝি পোকার গান,
এই সব কিছু মিলিয়ে চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় কখন যেন আথনুক এর চোখ লেগে এসেছে। হঠাৎ পিছন থেকে একটি হাত
আথনুক
এর মাথার উপর হাত বুলাতে লাগলে আথনুক লাফ দিয়ে চমকে উঠে বলল কে?।।