Friday, September 28, 2018



আমার ভালবাসা বুঝলেনা

আরিফ জামান

(পাঠ-)


ঠিক সময় মত ভর্তি ফরম দেওয়া শুরু হল অনেক পারাপারি করে অবশেষে তিন জনেই ফরম হাতে পেলাম
তুষার আমাকে বললো দোস্ত এখন আমার বাসায় চল পরে আমি বাইক করে তোকে নামিয়ে দিয়ে আসবো, না-রে, আমি বাসায় চলে যাই পরে কোন এক সময় আসবো, তুষার রেগে গেল, ছায়া বুঝতে পেরে আমাকে বললো ভাইয়া চলেন না.... যদিও প্রথম দেখায় ছায়ার প্রতি অতটা ফিলিংস নাই তারপরও তার কথা কেন জানি ফেলতে পারলাম না
তুষার আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও তার বাসায় এই নিয়ে পাঁচবার আসলাম। বাসার কলিং বেল দিতেই তুষারের ছোট্ট বোনটা দরজা খুলে দিল, তানু আমাকে দেখে অনেক খুশি হল কারণ সে জানে আমি যখন তাদের বাসায় আসি তখন তার জন্য চকলেট এর বক্স নিয়ে আসি। তানু আমাকে সালাম দিল, আচ্ছালামুআলাইকুম আথনুক ভাইয়া.... ওয়ালাইকুমআচ্ছালাম আপু.... কেমন আছ তুমি? ভাল না, কেন, কি হয়েছে? আম্মু বকা দিয়েছে, নিশ্চয় দুষ্টুমি করেছ? না, আমি ভাইয়ার সাথে আপনাদের কাছে যেতে চেয়েছিলাম তাই আম্মু বকা দিয়েছে, -তাই....? হ্যা,

এরমধ্যে আন্টি চলে আসলেন আমি আন্টিকে দেখে সালাম দিলাম, আচ্ছালামুআলাইকুম আন্টি, ওয়ালাইকুমআচ্ছালাম আব্বু, আন্টি আমাকে সবসময়ই আব্বু আব্বু বলেই ডাকেন। আব্বু তোমার আব্বু আম্মু কেমন আছেন? জি-আন্টি আলহামদুলিল্লাহ! সবাই ভাল আছেন, তুমি তো আমাদের বাসায় আসা ভুলেই গিয়েছ, না.....আন্টি আসলে বাহিরে ঘোরাঘুরি একটু কম করিত তাই আসা হয়না, তাই....? জি আন্টি, খুব ভাল, ধন্যবাদ আন্টি, তুমি তুষারের রুমে গিয়ে বস আমি নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি, জি-আন্টি

ততক্ষণে তুষার গোসলে ঢুকে পরেছে আমি তুষারের রুমে ঢুকে অবাক! তুষার আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে কারণ আমি আগে যখনি এসেছি তখনি তার রুম অগোছালো পেয়েছি কিন্তু এবারের চিত্রটা একটু ভিন্ন ধরনের পেলাম, দেয়ালে ছবি গুলো খুব সুন্দর করে লাগিয়ে রেখেছে, বুক সেফ্ল বই গুলো অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে, বিছানার চাদর টান টান করে গুছিয়ে রেখেছে, দেখে মনে হচ্ছে কেউ আপন মনে ঘরটা সাজিয়ে রেখেছে

আন্টি নিজেই নাস্তা নিয়ে ঘড়ে ঢুকলো আমি আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা আন্টি তুষারের দেখি আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে! কি পরিবর্তনের কথা বলছ আব্বু? আন্টি তুষারের রুমের কথা বলছি, ...এইটা... এগুলো তো ছায়া গুছিয়ে রেখেছে, তাই বলেন... আমি ভাবলাম তুষার নিজের কাজ নিজেই মনে হয় করতে সিখেছে, ওর কথা বাদদেও বাবা এক গ্লাস পানি পর্যন্ত ঢেলে খায়না আর তুমি রুম গোছানোর কথা বলছ, কিন্তু আন্টি ছায়া এত সুন্দর করে রুম গোছাতে পারে জানতাম না, আব্বু ছায়া শুধু যে রুম গোছাতে পারে তা কিন্তু নয় রান্নাও ভাল পারে, দেখেতো মনে হয় না, মানুষের চেহারা দেখে কি তার মনের কথা বুঝা যায়? আপনি ঠিক বলেছেন আন্টি

আন্টি নাস্তা দিয়ে চলে গেল এর মধ্যে তুষার গোসল থেকে বেরিয়ে এলো, আমি তুষার কে বললাম দোস্ত আর দেরি করবোনা এখন চল আমাকে একটু দিয়ে আয়, ! তুই এখন বাসায় গিয়ে কি করবি বস নাস্তা খেয়েনে তারপর একসাথে বের হব, আমি তুষার কে বললাম দোস্ত তানু আর ছায়া কে ডাকদে, ওরা কি গেস্ট যে ওদের কে ডাকবো তুই খা, ব্যাটা! তোরে ডাকতে বলছি তুই ডাকদে, তুই শুরু কর আমি ডাকছি

তুষার ছায়া এবং তানু কে ডেকে আনলো, তানু সোজা এসে আমার কোলে বসলো আমি ছায়া কে জিজ্ঞেস করলাম গেস্ট কে দাওয়াত দিয়ে আপনি কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিলন? ভাইয়া আমি গোসলে গিয়েছিলাম, ...তাই বলেন, ভাইয়া আপনি বসে আছেন কেন নেন না...এই বলে ছায়া নাস্তা আমার হাতে তুলে দিল। নাস্তা খেতে খেতে আমি ছায়া কে বললাম আপনি যে এত সুন্দর করে রুম গোছাতে পারেন জানতাম না, আপনাকে কে বলেছে আমি রুম গোছাতে পারি? বলা লাগে দেখেই তো বুঝতে পেরেছি, কি দেখেছেন আপনি? এইযে তুষারের রুম অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছেন, -এইটা, এটাতো সব মেয়েরা করে, মানলাম এটা সব মেয়েরা করে কিন্তু রান্না তো সবাই পারে না তাই না? তা ঠিক কিন্তু রান্নার কথা আপনাকে কে বলেছে? আন্টি, এটা চাচীর অবভাস, অবভাস না আন্টি সত্যি কথায় বলেছেন, বুঝতে পেরেছেন? বুঝলাম। আমি ছায়া কে বললাম ছায়া চলেন আমাদের বাসায় যাই, আজকে না ভাইয়া অন্য কোন এক সময় যাব, তাহলে বিকেলে তুষারের সাথে আসিয়েন একসাথ বসে আড্ডা দিব কি বলেন? ঠিক আছে আসবো

আন্টি এবং ছায়ার কাছে বিদায় নিয়ে আমি আর তুষার বাসা থেকে বেরিয়ে পরলাম। রাস্তায় যানজটের কারণে বাসায় পৌঁছাতে একটু দেরি হয়ে গেল, আমি তুষার কে বললাম দোস্ত বাসায় চল, না দোস্ত এখন আর না পরে অন্য কোন এক সময় যাব, বিকেলে ছায়া কে নিয়ে টি এস সি তে আসিস, ঠিক আছে আসবোনে। তুষার আমাকে বাসায় নামিয়ে চলে গেল
বিকেল ঠিক চারটার সময় সবাই টি এস সি তে একসাথে হলাম, ছায়া কে গোলাপী রঙের ড্রেসে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে তার দিকে তাকালাম মনে হচ্ছে ফুট ফুটে একটা পরী বসে আছে এত সুন্দর করে সেজে এসেছে চোখ ফিরিয়ে নিতেই পারছিনা, একটু কাছে গেলাম ছায়া আমাকে দেখে দারিয়ে গেল এবং বললো আথনুক ভাইয়া এই বুঝি আপনার আসার সময় হল? কোথায় দেরি করলাম? আমরা আধাঘন্টা আগে এসে বসে আছি আর আপনি এখন এলেন এটা দেরি নাতো কি বলেন? আচ্ছা ঠিক আছে এর জন্য আমি Sorry বললাম খুশি? আসলে আমি এখানে কাউকে চিনিনাতো তাই একা একা বসে ভাল লাগছিল না, কেন! এখানে তুষার আছে ওর বন্ধুরা আছে ভাল না লাগার কি হল? দেখেন না তুষার আমাকে এখানে বসতে বলে কোথায় যে গেল, আচ্ছ! আপনি বসেন আমি দেখেছি তুষার কই, না-থাক, ওর সময় হলে এমনিতেই আসবে আপনার যাওয়ার দরকার নাই আপনি আমার পাশে বসেন, ছায়া আপনি কিছু খেয়েছেন? ভাইয়া আপনি আমাকে তুমি করে বললে খুশি হব, বলতে পারি যদি আপনি আমাকে তুমি করে বলেন, ঠিক আছে বলবো, ছায়া একটা কথা বলবো? হ্যা বলো, এই ড্রেসে তোমাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে, মজা করছো? না....সত্যি বলছি, ধন্যবাদ। ছায়া চল আমরা কিছু খাই, কি খাবে বল? কফি, আমি কফির অর্ডার দিলাম

এই তুষারটা যে কোথায় গেল কে জানে, একটা ফোন করে দেখি সে কোথায় হ্যালো তুষার তুই কি বলতো? কেন কি হয়েছে? তুই ছায়া কে এভাবে ওদের কাছে বসিয়ে রেখে কোথায় গেলি? দোস্ত আমি বিথীর সাথে আছি আমার আসতে দেরি হবে তুই ছায়া কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসিস, আর হ্যা! ছায়া কে বিথীর কথা বলিসনা বুঝতে পেরেছিস? হ্যা বুঝলাম, (বিথী) তুষারের (girlfriend) ওরা দুজন দুজনকে অনেক ভালবাসে, আমি বিথী কে কয়েকবার দেখেছি কিন্তু অতটা ভাল লাগে নাই যতটা ছায়া কে ভাল লেগেছে, তুষার কেন যে বিথীর প্রতি এত দুর্বল তা আমি বুঝতে পারি না
ছায়া আমাকে জিজ্ঞেস করলো তুষার কি বললো ভাইয়া? একটা কাজে গিয়েছে আসতে দেরি হবে আমাকে বলছে তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে, কথাটা শুনে ছায়া একটু মন খারাপ করল, আমি ছায়া কে বললাম ছায়া সন্ধ্যা হয়ে আসছে চল বাসায় যাই, না ভাইয়া আর একটু পরে যাই, মন খারাপ হয়ে গেছে তাই না? দেখোনা ভাইয়া আমাকে ফুচকা খাওয়াবে বলে নিয়ে এসেছে আর এখন ফাকি মারলো, আমি হাসতে লাগলাম, তুমি হাসো কেন? তোমার কথা শুনে, আমি আবার কি বললাম যে হাসতেছো? এইটার জন্য কেউ মন খারাপ করে নাকি! আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে ফুচকা খাওয়াবো

আমি ছায়া কে বললাম ছায়া চল রাস্তা পার হয়ে ওখানে ফুচকা খেয়ে তারপর একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় যাব, কি বল? ঠিক আছে চল, রাস্তা পার হওয়ার সময় ছায়া আমার হাত ধরলো তার গায়ের স্পর্শে আমার গা একটু কেঁপে উঠল আর সেটা ছায়া কিছুটা অনুভব করলো, ছায়া আমাকে বললো ভাইয়া তুমি কি এর আগে কোন মেয়ের হাত ধর নাই? হ্যা ধরেছি তবে তুমি যেভাবে বগলের নিচে হাত দিয়ে ধরেছ এভাবে কখনো কেউ ধরে নাই, এটা বলতেই ছায়া হাসতে লাগলো, ছায়া তুমি হাসতেছো কেন? ভাইয়া তুমি অনেক ভীতু, তাই? হ্যা
আমরা রাস্তা পার হয়ে ফুচকার দোকানে গিয়ে বসলাম, ফুচকার দোকানের লোকটা জিজ্ঞেস করলো মামা কি দিমু চটপটি না ফুচকা? একটা চটপটি আর একটা ফুচকা দাও, ছায়া আমাকে জিজ্ঞেস করলো তুমি ফুচকা খাওনা...? খাই তবে খুব বেশি না, কেন...? ভাল লাগে না তাই খাইনা, আচ্ছা

আমরা ফুচকা খেয়ে আমি একটা রিক্সা ডাক দিলাম এই মামা ধানমন্ডি যাবা? হ্যা যামু, ভাড়া কত? একশো টাকা দিয়েন, একটু কম নেওনা মামা! আচ্ছা আশি টাকা দিয়েন, আমরা দুজনে রিক্সায় উঠে বাসার উদ্দেশে রওনা দিলাম, ছায়া আমার ডান হাতটা সক্ত করে ধরে রেখেছে শুধু তাই নয় মাথাটা আমার ঘাড়ে উপর দিয়ে রেখেছে আমি ছায়া কে জিজ্ঞেস করলাম ছায়া তোমার কি খারাপ লাগছে? ছায়া বললো মাথাটা হঠাৎ কেন জানি ব্যথা করছে, একটা ঔষধ কিনে দিব...? হলে ভালোই হয়, আমি বুঝলাম ছায়ার কষ্ট হচ্ছে আমি মাঝ পথে রিক্সা দার করিয়ে একটা ঔষধের দোকান থেকে একটা (এইস আর নিউ টেক) নিয়ে ছায়া কে খাওয়ায় দিলাম

ছায়া কে দেখে অনেক কষ্ট হচ্ছে আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছি তার জন্য আমার এত খারাপ লাগার কারণ কি আবার এটাও ভাবছি না-আমি তার প্রেমে পড়ে গিয়েছি! ছায়ার চোখ বন্ধ আমি ছায়া কে জিজ্ঞেস করলাম ছায়া আমি কি তোমার কপালে হাত দিয়ে ম্যাচেজ করে দিব? ঠিক আছে দাও.... আমি ছায়ার কপালে হাত দিয়ে ম্যাচেজ করে দিচ্ছি কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারলাম ছায়া গভীরে ঘুমে রয়েছে আমি তাকে Disturb না করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মনে মনে ভাবছি এই পথ যদি শেষ না-হত।
বন্ধুরা আপনাদের মন্তব্যের উপর নির্ভর করবে আমি (পাঠ-) পোস্ট করবো

খুব শীগ্রই এই গল্পের (পার্ট-০) পোস্ট করা হবে এবং পার্ট-০তে বিশেষ আকর্শন থাকবে।



Coming soon will be posted (Part-03) of this story.


নোট: গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ!!


No comments:

Post a Comment