♥আমার
ভালোবাসা বুঝলেনা
♥
আরিফ জামান
(পার্ট-৭)
ছায়াকে রক্ত দেওয়ার
পর শরীরটা একটু খারাপ
লাগছে মনে হচ্ছে একটু ঘুমাতে পারলে ভাল
হত কিন্তু এখন তো
ঘুমানো যাবেনা কারণ
ছায়া অসুস্থ আর আমি
ঘুমিয়ে পরলে তার
খেয়াল রাখবে কে।
ফজরের আযান শোনা যাচ্ছে মনে হয়
সকাল হতে আর বেশী দেরী নাই,
একটু পরে তুষার আসবে ও আসলে তখন আমি বাসায় গিয়ে গোসল করে একটু রেস্ট নিব,
গতকাল ছায়ার অসুস্থের কথা শুনে
শরীরে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে এসেছি এখন
শরীরে জ্বর না থাকলেও শরীরটা কেমন
যেন লাগছে মনে হচ্ছে এখন গোসল করতে পারলে মনে হয় ভাল লাগতো।
ঠিক সকাল সাতটার দিকে তুষার, ছায়া
এবং আমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসলো
ছায়া তখনো ঘুমাচ্ছিল তুষারের কন্ঠ
শুনে ছায়ার ঘুম ভেঙে গেল,
তুষার আমাকে বললো কিরে তোর চেহারার এই অবস্থা
কেন সারা রাত নিশ্চয়ই তুই ঘুমাস
নাই তাই না?
না দোস্ত আমি ঘুমিয়েছি,
শোন!
আমাকে মিথ্যা কথা বলে
লাভ নাই কারণ তোর চেহারায় বলে দিচ্ছে
তুই সারারাত জেগে ছিলি, এর
মধ্যে ছায়াও বলে ফেললো আসলেই তুষার আথনুক ভাইয়া সারারাত আমার যা
সেবা যত্ন করে সেটা তুইও করতে পারতিনা,
তাই নাকি?
তাহলে তো ভালই হল আম্মুকে বলে তোদের
দুজনের সারাজীবন একসাথে
থাকার ব্যবস্থা করতে হবে
যাতে আথনুক সারাজীবন তোর সেবা
যত্ন করতে পারে,
ছায়া একটু লজ্জা পেয়ে গেল,
তুষারের স্বভাব সবসময়
ইয়ারকি ফাইজলামি করা, আমি
তুষারকে বললাম ঐ! তুষার
তুই চুপ করবি!!
আচ্ছা চুপ করলাম এখন হাত মুখ ধুয়ে আয় আম্মু তোর জন্য নাস্তা পাঠিয়েছে আমরা
একসাথে বসে নাস্তা
করে নেই তারপর তুই বাসায় গিয়ে রেষ্ট করিস।
আমি হাত মুখ ধুয়ে আসলাম এরমধ্যে তুষার নাস্তা
রেডি করে ফেলেছে আমি ছায়াকে
বললাম ছায়া তুমি উঠে বসে খেতে পারবে না আমি খাওয়ায় দিব? ভাইয়া আমাকে
একটু ধরে বসিয়ে দেন আমি নিজেই খেতে পারবো,
ঠিক আছে,
আমি আর তুষার ছায়াকে বসিয়ে দিয়ে
আমি ছায়ার হাত মুখ ধুয়ে দিলাম,
আমি তুষারকে বললাম তুষার
তুই ছায়ার চোখ মুখ মুছে দে আমি ময়লা পানি গুলো ফেলে দিয়ে আসছি,
ঠিক আছে তারাতারি আয় অনেক
ক্ষুধা লেগেছে, কেন! তুই বাসায়
নাস্তা করে আসিস
নাই?
না!
কেন?
আথনুক তুই পাগল নাকি বলতো?
কেন!
আমাকে দেখে কি তোর পাগল মনে হচ্ছে?
আমার তো তাই মনে হচ্ছে,
আমি এমনকি বললাম যে আমাকে দেখে তোর পাগল মনে হচ্ছে?
তুই কিকরে ভাবলি আমি তোদের দুজনকে ছেড়ে বাসায়
একলা বসে নাস্তা করবো? ও......তাইনাকি.....? বন্ধুর জন্য
এতো ভালোবাসা এতো ভালোবাসা
রাখবো কোথায় তুষার?
আমাদের ঝগড়া দেখে
ছায়া হাসতেছে আমি ছায়াকে
জিজ্ঞেস করলাম ছায়া
তুমি হাসতেছো কেন? ভাইয়া তোমাদের
ঝগড়া দেখে,
এখানে হাসার কি হল শুনি?
আথনুক ভাইয়া আর তুষার দুজনেই শোনেন তোমরা
যে দুই বন্ধু দুজনকে অনেক ভালবাস
তার প্রমাণ হল এটা
এবং আমি দোয়া করি তোমাদের বন্ধুত্ব চির
অমর হউক,
শুনে খুশি হলাম এন্ড ম্যাডাম আপনাকে এর
জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি
ছায়াকে ধন্যবাদ দিয়ে
ময়লা পানি ফেলতে চলে গেলাম।
অনেক গল্প গুজবের মধ্য দিয়ে
আমরা তিনজনে নাস্তা সেরে
নিলাম,
এবার বাসায় যাবার পালা কারণ আমি একটু রেস্ট না নিলে রাতে আর ছায়ার কাছে রাত জেগে বসে থাকতে পারবোনা তাই আমি
ছায়া আর তুষারের কাছ থেকে
বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশে রওনা দিলাম।
বাসায় পৌছাতে পৌছাতে প্রায়
সকাল নয়টা বেজে গেল,
কলিংবেল দিতেই আম্মু
দরজা খুলে দিল আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে বললো
কিরে আথনুক তোর চেহারার একি অবস্থা
করেছিস!!
তুই ঠিক আছিস তো আর ছায়ার কি অবস্থা?
আম্মু তুমি খামাখা চিন্তা করছো
আমি একদম ঠিক আছি আর ছায়াও অনেক ভাল আছে,
যা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি টেবিলে নাস্তা লাগিয়ে
দিচ্ছি,
আম্মু আমি নাস্তা করে এসেছি, কোথায়
নাস্তা করলি তুই? তুষারের
বাসা থেকে আন্টি হাসপাতালে নাস্তা পাঠিয়ে
দিয়েছে আমি তুষার
আর ছায়া ওখানে বসে নাস্তা করে ফেলেছি, ও....আচ্ছা! ঠিক
আছে তাহলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুমিয়ে নে বাবা
নয়তো শরীর খারাপ করবে,
আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি আমার রুমে ঢুকে ড্রেস চেঞ্জ করে তুষারকে একটা ফোন
দিলাম,
হ্যালো তুষার, হ্যা বল
শুনছি,
আমি বাসায় পৌছে গিয়েছি,
তাই?
তাহলে এখন ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়, আরে সেটা
তোকে ভাবতে হবেনা আমি কি বলি সেটা মন দিয়ে শোন,
বল শুনছি,
শোন!
বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ারে একটা
ছোট্ট একটা কাগোজে একটা ঔষধ
লেখা আছে ঐটা নাস্তার পরে ছায়াকে
খাওয়ানোর কথা তুই
ঔষধটা এনে খাওয়ায় দে বুঝতে
পেরেছিস?
হ্যা বুঝেছি,
ছায়া কি করছে?
ঘুমিয়ে পড়েছে, ও আচ্ছা
ঠিক আছে তাহলে রাখছি?
ঠিক আছে রাখ।
আমি ফোনের লাইন কেটে দিয়ে আমি গোসলে ঢুকলাম আম্মু এসে
দরজায় নক করছে,
আথনুক এই আথনুক!
আমি জবাব দিলাম আম্মু আমি গোসলে,
গোসল থেকে বেরিয়ে টেবিলের উপর
পায়েস রেখেছি খেয়ে নিস
আর শোন আমি একটু বের হচ্ছি,
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও আমি খেয়ে নিব,
মায়ের মন! আম্মু জানে আমি নাস্তা খেয়ে এসেছি
তারপরেও সে আমার
জন্য পায়েস বানিয়ে রেখেছে।
আমি গোসল থেকে বের হয়ে আম্মুর বানানো পায়েস
খেলাম,
আম্মু জানে আমি পায়েস অনেক পছন্দ করি তাই সে সবসময় আমার জন্য পায়েস বানিয়ে রাখে, বিছানায় শুয়ে
পরলাম চোখে অনেক ঘুম কিন্তু কেন জানি
ঘুমাতে পারছিনা, মনে হচ্ছে
আমি ঘুমিয়ে পরলে কিছু
একটা জিনিস মিস করবো,
কিন্তু জিনিসটা কি
সেটা বুঝতেই পারছিনা, ভাবতে ভাবতে
কখন যে গভীর ঘুমে হারিয়ে গিয়েছি বুঝতেই
পারিনি।
ঠিক তিনটার দিকে আম্মু
এসে দরজায় নক করছে আথনুক!
এই আথনুক!!
জ্বী আম্মু,
ওঠ বাবা তিনটা বাজতেছে লাঞ্চ করবিনা? আম্মু
একটু পরে করবো,
না তুই এখনি ওঠ,
আমি জানি আমি না ওঠা পর্যন্ত আম্মু ডাকতেই
থাকবে তাই কি আর করার উঠে পরলাম,
দুপুরের খাবার খেয়ে
গল্প গুজব করতে পাঁচটা বেজে গেলো, এদিকে
তুষার বলেছে ঠিক সন্ধ্যা সাতটার দিকে
হাসপাতালে থাকতে।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে
হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা
দিলাম হাসপাতালে পৌছাতে প্রায়
দের ঘন্টা লেগে গেল,
আমি কেবিনের দরজায় নক
করলাম ছায়া ভেতর থেকে বললো আসেন,
আমি ভেতরে প্রবেশ করে দেখলাম
তুষার নাই আমি ছায়াকে জিজ্ঞেস করলাম
ছায়া তুষার কোথায় গেছে?
ভাইয়া ওর কে যেন এসেছে তাই সে নিচে গিয়েছে,
ও....আচ্ছা! ছায়া
কিছু না বুঝলেও আমি ঠিকই
বুঝতে পেরেছি নিচে কে
এসেছে,
আমি ছায়াকে জিজ্ঞেস করলাম
এখন তোমার শরীর কেমন?
ভাইয়া তোমরা যে সেবা যত্ন করছো তাতে মনে হচ্ছে আগামীকাল সকালে বাসায়
যেতে পারবো,
হয়েছে তোমাকে আর চাপা
মারতে হবে না,
চাপা না ভাইয়া আমি সত্যি বলছি,
হয়েছে এখন কথা কম বলে আমি স্যুপ নিয়ে এসেছি
তুষার আসতে আসতে তুমি স্যুপ খেয়ে নাও।
No comments:
Post a Comment