Friday, September 28, 2018



আমার ভালবাসা বুঝলেনা

আরিফ জামান

(পাঠ-)


মাথাটা একটু ঝিম ঝিম করছে অসুস্থ অবস্থায় রক্ত দেওয়ার কারণে হয়তো বা এটা হতে পারে, আথনুক জীবনে এই প্রথম কারো জন্য রক্ত দিচ্ছে, আথনুক ছায়াকে রক্ত দিতে পেরে যেন নিজেকে অনেক গর্ব বোধ মনে করছে। আথনুক যদিও ছায়াকে এখনো তার মনের কথাটা জানাতে পারে নাই তবে আথনুক ছায়াকে রক্ত দিতে পেরে অনেক খুশি আথনুক ভাবছে সে তাকে তার ভালোবাসার কথা বলতে পারেনিতো কি কি হয়েছে তার রক্ত তো ছায়ার শরীরে বইছে
আথনুক রক্ত দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এসে ছায়াকে আরো একবার দেখে নিল তুষার আথনুক কে ডেকে দোস্ত তুই এখন বাসায় গিয়ে রেস্ট কর আথনুক রেগে গেল, তুই কি পাগল? কেন? ছায়ার এখনো জ্ঞান ফেরেনি আর তুই বলছিস আমাকে বাসায় গিয়ে রেস্ট নিতে, আরে রাগ করছিস কেন তুই অসুস্থ তার উপর আবার রক্ত দিয়েছিস তাই আমি তোকে বাসায় যেতে বললাম, তাছাড়া আমরা দুজন এখানে না থেকে একজন রাতের বেলা থাকবো আর একজন দিনের বেলা থাকবো এইটা ভাল হয়না? তা তুই ঠিক বলেছিস

এর মধ্যে তুষার এর বাসা থেকে সবাই এসে পরলো তা কিছুক্ষণ পর আথনুক এর বাসায় থেকে সবাই এল, আথনুকের আম্মুর ছায়ার জন্য সুফ নিয়ে এসেছে, আথনুক সবার চোখ ফাঁকি দিল কিন্তু তার মায়ের চোখ ফাঁকি দিতে পারলোনা, আথনুকের মা তাকে জিজ্ঞেস করলো তুই ছায়াকে রক্ত দিয়েছিস তাই না? হ্যা দিয়েছি, তোরনা জ্বর? এখন নাই, চল বাসায় যাই, না মা তুমি যাও আমি পরে যাব, আথনুক আর তুষার রাত আর দিন ভাগাভাগি করে নিল, আথনুক রাতের বেলা ছায়ার কাছে থাকবে আর তুষার দিনের বেলা ছায়ার কাছে থাকবে
যদিও হাসপাতালে মেয়েদের কেবিনে ছেলেরা থাকা নিষেধ তার পরেও আথনুক ভাবছে বারান্দায় চেয়ারের উপর বসে রাত কাটিয়ে দিবে

এক এক করে সবাই বাসায় চলে গেল আর আথনুক তার ভালোবাসার মানুষটির গভীর ঘুম ভাঙানোর জন্য বা মুখে একটা কথা শুনার জন্য গুটিসুটি হয়ে বারান্দয় বসে রইলো
ঘড়ির কাঁটা বারটা থেকে একটা, একটা থেকে দুইটা, দুইটা থেকে তিনটা এভাবে চলেই যাচ্ছে কিন্তু আথনুকের আশার ফুল আর ফোটে না, ঘড়ির কাঁটার একএকটা মিনিট আথনুকের কাছে একএকট ঘন্টা তার কাছে যেন সময় যেতেই চাচ্ছে না
হঠাৎ হাসপাতালের নার্স এসে আথনুকে ডেকে বললেন আপনার রোগীর জ্ঞান ফিরেছে আপনি দেখা করতে পারেন, আথনুক এই কথা শুনে আগে আল্লাহ পাকের দরবারে শুকরিয়া কামনা করলো এবং সে এতটাই খুশি হল যে তার চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো

আথনুক ছুটে গেল ছায়ার কেবিনে, আথনুক ছায়ার কেবিনে ঢুকে ছায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ছায়া চোখ খুলে আথনুকের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিল আথনুক ছায়ার চোখে পানি দেখে নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলোনা আথনুক ছায়াকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো ছায়া কাদিওনা সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ
ছায়া আথনুকে জিজ্ঞেস করলো ভাইয়া বাসা থেকে আর কেউ আসে নাই? আথনুক ভেজা কন্ঠে জবাব দিল হ্যা এসেছিল কিন্তু হাসপাতালে একজনের বেশি থাকা নিষেধ তাই তারা সবাই বাসায় চলে গিয়েছে, ভাইয়া তুমি বাসায় গেলেনা কেন? এমনিতেই যাইনি, আথনুক ছায়াকে বুঝতে দিলোনা সে তার জন্যই হাসপাতালে রয়েছে, আথনুক কথা ঘুরিয়ে বললো ছায়া তুমি কি কিছু খাবে? ছায়া ভিজা কন্ঠে জবাব দিল না, ভাইয়া তুমি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখ, আথনুক ছায়ার শক্ত করে ধরে ছায়াকে বললো ছায়া তুমি ঘুমাও আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, না ভাইয়া তুমি বরং ঘুমাও

আথনুক যদিও বুঝতে পারছে ছায়া নিজেকে খুব একাত্তবোধ করছে তাই সে ছায়াকে বারবার সান্ত্বনা দিচ্ছে। ছায়া যখন আথনুকে তার হাত শক্ত করে ধরতে বলেছে আথনুক তখন খুশি যেন ধরে রাখতে পারলোনা আথনুক মনে মনে ভাবছে এইভাবে সারাজীবন যদি ছায়ার হাত ধরে রাখতে পারতো তাহলে হয়তো বা তার মনের আশা আকাঙ্খা পর্ণ হত কি আর করার ছায়া এখনো জানেনা আথনুক তাকে পাগল প্রেমিকের মত ভালবাসে। আথনুক নিজেও জানেনা তার এই স্বপ্ন আদৌ পুর্ণ হবে কিনা আথনুক শুধু সেই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছে কবে ছায়াকে তার মনের কথাটা বলতে পারবে।


নোট: গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ!!


No comments:

Post a Comment