Friday, September 28, 2018


♥আমার ভালবাসা বুঝলেনা ♥

আরিফ জামান

(পাঠ-৪)


আথনুক জীবনে কখনো কারো কাছে হার মানে নাই কিন্তু আজ তার মনে হচ্ছে সে ছায়ার কাছে হেরে যাবে, আথনুক নিজেও বুঝতে পারছেনা এই ভাবনা তাকে কোথায় নিয়ে গিয়ে দার করিয়ে দেবে
আথনুক প্রতিদিন ছায়ার সাথে ফোনে কথা বলে এবং সে কয়েকবার ছায়াকে জিজ্ঞেসও করেছে কিন্তু ছায়া বারবার শুধু একই কথা বলেছে "সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে বলবো" আথনুক রাগ করে এখন আর জিজ্ঞেস করে না কারণ সে জানে যতবার সে ছায়াকে জিজ্ঞেস করবে ছায়া ততবার একই কথা বলবে তাই সে সিদ্ধান্ত নিল সে আর কখনো ছায়াকে জিজ্ঞেস করবেনা
দেখতে দেখতে ভর্তি পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এলো, আথনুক আজকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাবে আর এজন্য সে কোন ড্রেস পরে যাবে সেটা ঠিক করতে পারছেনা কারণ শুধু ভর্তি পরীক্ষা যদি হত তাহলে হয়তোবা সে এতটা ভাবত না কিন্তু আজকে ছায়া আসছে তাই সে ড্রেসের উপর একটু বেশি নজর দিচ্ছে

আথনুক ঠিক সময় মত কলেজে পৌঁছালো এবং সে কলেজে এসে দেখে তার জন্য তুষার ছায়া অপেক্ষা করছে, তুষার আথনুককে দেখে সেই আগের মতো ইয়ারকি শুরু করলো, কিরে দোস্ত তুই পরীক্ষা দিতে এসেছিস না কোন মেয়ের সাথে লাইন মারতে এসেছিস? তুষারের এটা অবভাস আথনুক যখন প্যান্ট শার্ট ইন করে আসে তখন সে আথনুককে রাগানোর জন্য ইয়ারকি করে। আথনুক বললো হ্যা লাইন মারতে এসেছি, মেয়েটা কে দোস্ত? তোর দাদীর সাথে, এই কথা শুনে ছায়া হেসে ফেললো ছায়া তুষারকে বলছে এই তুষার! আথনুক ভাইয়া তোর মত পাগল ছাগল নাকি যে যেমন তেমন ড্রেস পরে আসবে? তুষার ছায়ার কথা শুনে এবার ছায়ার সাথেও ইয়ারকি শুরু করলো, কিরে ছায়া তুই কি আথনুকের প্রেমে পড়ে গিয়েছিস নাকি? ছায়া কথাতে মন খারাপ করলোনা বরং সে বলল আথনুক ভাইয়া আমার থেকেও অনেক সুন্দরী মেয়ে পাবে বুঝতে পেরেছিস? হয়েছে কথা না বলে এখন চল পরীক্ষার হলে ঢুকে পড়ি

তিন জনের আলাদা আলাদা ভাবে ছিট পরেছে, আথনুক ভাল করে জানে তুষার সময়ের আগেই পরীক্ষার হল থেকে বের হবে, তুষার ইয়ারকি ফাজলামি যাই করুক না কেন কিন্তু সে লেখাপড়ার দিকে অনেক ভাল
আথনুক পরীক্ষার হল থেকে বের হল কিন্তু ছায়া এবং তুষারের দেখা নেই আথনুক ভাবছে হয়তোবা দেরী হচ্ছে তাই সে বাহিরে অপেক্ষা করতে লাগলো, কিছুক্ষণ পরে তুষার ফোন করলো আথনুক ফোন রিসিভ করলো হ্যালো..... তুষার জিজ্ঞেস করলো কিরে তুই কোথায়? আমি তোর জন্য বাহিরে অপেক্ষা করছি, অপেক্ষা কর আমি আসতেছি, ঠিক আছে, তুষার ফোনের লাইন কেটে দিল

এর মধ্যে ছায়াও হল থেকে বেরিয়ে এল, ছায়া আথনুককে জিজ্ঞেস করলো ভাইয়া তুষার কোথায়? কোথায় আছে জানি না তবে সে বলেছে আসতেছে, আথনুক ছায়াকে জিজ্ঞেস করলো তোমার পরীক্ষা কেমন হল? মোটামুটি, ভাইয়া তোমার পরীক্ষা কেমন হল? ভাল বলবো না তবে খারাপ হয়নি
তুষার চলে আসলো আথনুক তুষারকে জিজ্ঞেস করলো কিরে তুষার তুই কখন বের হয়েছিস? অনেক আগেই, আথনুক বললো অনেক ক্ষুধা লেগেছে চল কিছু খেয়ে নেই, চল

কলেজ থেকে বের হয়ে তিন জনে একটা হোটেলে বসলো আথনুক ছায়াকে জিজ্ঞেস করলো ছায়া তুমি কি খাবে? ভাইয়া তোমরা যেটা খাবে আমার জন্য ওটাই অর্ডার দেও, আথনুক তুষারকে অর্ডার দেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দিল
আথনুক ভাবছে আজকে ছায়াকে বাসায় ইনভাইট করলে কেমন হয় তাই সে দেরি না করে ছায়াকে বললো ছায়া চল আমাদের বাসায় যাই? ছায়া আজকেও এরিয়ে গেল, না ভাইয়া আজকে যাবনা আর একদিন যাব, তুমি এর আগেও বলছো আর একদিন যাবে আজকেও একই কথা বলছো আমাদের বাসায় গেলে কোন সমস্যা আছে নাকি? আসলে ভাইয়া আজকে বাড়ি থেকে আমার বড় ভাইয়া আসবে তাই যেতে পারছিনা, তবে কথা দিলাম এর পরে আর না করবোনা, আথনুক আর কিছু বললো না, হঠাৎ ছায়ার ফোন বেজে উঠলো ছায়া একটু দূরে সরে গিয়ে ফোন রিসিভ করে কথা বলছে

আথনুক ভাবছে ছায়াকে এমন কে ফোন করেছে যে আমার সামনে বসে কথা বলা যাবে না, আথনুক ভাবলো আজকে ছায়াকে জিজ্ঞেস করবে সে কার সাথে কথা বলে, ছায়া কথা শেষ করে এসে বসতেই আথনুক ছায়াকে জিজ্ঞেস করলো কে ফোন করেছে Boyfriend? ছায়া ভাবতেই পারে নাই যে আথনুক এই ধরনের প্রশ্ন করবে তাই সে লম্বা একটা শাস নিয়ে বললো না ভাইয়া বাড়ি থেকে ফোন করেছে, আথনুক আর কিছু বললো না কারণ আথনুক বুঝতে পেরেছে ছায়া মিথ্যেকথা বলছে
তুষার অর্ডারের খাবার নিয়ে আসলো, কিছুক্ষণ আগে আথনুকের পেটে অনেক ক্ষুধা ছিল কিন্তু ছায়ার প্রশ্নের উত্তরে আথনুকের পেটের ক্ষুধা নষ্ট হয়ে গেছে, আথনুক কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে অনেক কষ্টে তিন চার চামচ খিচুড়ি খেল, খাওয়া দাওয়া শেষ করে আথনুক বিদায় নিয়ে বাসারউদ্দেশে রওনা দিল

আথনুক প্রতিদিন যখন ছায়ারসাথে দেখা করতে যায় তখন অনেক খুশি থাকে কিন্তু যখন দেখা করে চলে আসে তখন আথনুকের মন খারাপ হয়ে যায়, আজকেও তাই হল যেটা আথনুক একদম পছন্দ করে না, আথনুক নিজের মনকে প্রশ্ন করে আমি যেরকম সবসময়ই ছায়াকেনিয়ে ভাবছি সেকি এরকম আমাকে নিয়ে ভাবে! কিন্তু আথনুক এই প্রশ্নের কোন উত্তর পায়না। দিন চলে যায় রাত আসে কিন্তু আথনুকের ভাবনা শেষ হয়না
এর মধ্যে পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে আথনুক অসুস্থর কারণে কলেজে রেজাল্ট জানার জন্য যেতে পারনি তাই তুষার তাকে ফোন করে বললো দোস্ত আমরা তিনজন টিকে গিয়েছি, আথনুক অসুস্থের কথা শুনে তুষার বললো দোস্ত আমি ছায়া আর তানু তোকে দেখতে আসতেছি, ঠিক আছে আয়

আথনুক অসুস্থ তারপরও সে ছায়ার পছন্দের জিনিস "ফুচকা" কিনতে বাসার নিচে নামলো, আথনুক ছায়ার জন্য ফুচকা আর তানুর জন্য চকলেট এর বক্স কিনে বাসায় এসে দেখে ততক্ষণে তুষার তানু ছায়া তার জন্য অপেক্ষা করছে, তুষার আথনুকের হাতে ফুচকা আর চকলেটের বক্স দেখে রেগে গেল, কিরে আথনুক তুই না অসুস্থ এই অবস্থাই বাসার নিচে নামলি কোন সাহসে? তুই চিন্তা করিস না আমি এখন অনেক ভাল আছি, ছায়া বললো ভাইয়া এগুলো আনার দরকার কি ছিল? আথনুক কথা এগিয়ে গিয়ে বললো তোমরা কখন এসেছো? বিশ মিনিট আগে, আমরা রুগীকে দেখতে এলাম আর রোগী বাজারে এইটা বলে ছায়া হাসতে লাগলো

আথনুক ছায়াকে পুরো বাসা ঘুরে দেখালো, ছায়া আথনুককে জিজ্ঞেস করলো ভাইয়া তুমি সারাদিন বাসায় থাকো তোমার খারাপ লাগেনা? আজোব তো খারাপ লাগবে কেন? না.... এত বড় বাসা অথচ লোক সংখ্যা কম তাই জিজ্ঞেস করলাম, বাসা ছোট হোক আর বড় হোক বাসাতো বাসায় এখানে খারাপ লাগার কিছু নেই, ছায়া কথা ঘুরিয়ে আথনুককে জিজ্ঞেস করলো ভাইয়া আমি ফুচকা পছন্দ করি বলে তুমি আমার জন্য ফুচকা নিয়ে এসেছো তাইনা? আথনুক একটু হতভম্ব হয়ে বললো না..... আসলে আমার জ্বরের মুখে কোন কিছু ভাল লাগছিল না তাই ফুচকা কিনে আনলাম, ভাইয়া তুমি যে মিথ্যা বলছো সেটা তোমার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, হয়েছে এত বেশি বোঝার দরকার নেই এখন নাস্তা খেতে চল

আথনুকের রুমে তুষার ল্যাপটপে ফেসবুকে তার বিথীর সাথে chatting করছে, আথনুক আর ছায়া ঘরে ঢুকতেই তুষার logout হয়ে ফেসবুক থেকে বেরিয়ে এলো, তুষার আর বিথীর Relation সম্পর্কে আথনুক জানে, কিন্তু ছায়া জানেনা আর তুষার ছায়াকে জানাতও চায়না, আথনুক কয়েকবার তুষারকে বলেছিল তার আর বিথীর Relation এর কথা ছায়াকে জানাতে কিন্তু তুষার জানাতে রাজি হয় নাই, তাই আথনুক ছায়াকে কোন কিছু জানায় নাই
আথনুককে দেখে তুষার বললো দোস্ত আর দেরি করবোনা এখন বাসায় যাব, শোন! খুব বেশি দেরি হয়নি রাতে খেয়ে তারপর সবাই বাসায় যাবি তাছাড়া ছায়া এই প্রথম আমার বাসায় এসেছে না খেয়ে আম্মু যেতে দিবেনা, তুষার আর কিছু বললো না কারণ সে জানে না খেয়ে আথনুক যেতে দিবেনা তাই সে বললো ঠিক আছে

আথনুক বললো ছায়া চল আমি তুষার তানু আহনাফ আর তুমি মিলে ছাদে থেকে ঘুরে আসি, "আহনাফ" আথনুকের ছোট ভাই, তুষার ছাদে যাওয়ার কথা শুনে বললো দোস্ত তোরা যা আমার একটা মেইল করতে হবে তাই আমি যাবো না, আথনুক বুঝতে পেরেছে তুষার বিথীর সাথে chatting করবে, আথনুক আর কিছু না বলে তুষারকে বাসায় রেখে বাকি সবাইকে নিয়ে ছাদে উঠলো, ছায়া আথনুককে বললো ভাইয়া ছাদটা অনেক পরিস্কার, হ্যা, তুমি নিশ্চয়ই প্রতিদিন ছাদে উঠ? প্রতিদিন না তবে মাঝে মাঝে উঠি, এভাবে আথনুক আর ছায়ার মধ্যে সুখ দুঃখের গল্প চলতে থাকলো


নোট: গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ!!

No comments:

Post a Comment