Friday, September 28, 2018




আমার ভালবাসা বুঝলেনা

আরিফ জামান

(পাঠ-)


যানজটের কারণে রিক্সা ধিরে ধিরে এগোচ্ছে আথনুক মনে মনে ভাবছে মেয়েটা হঠাৎ করে এত কাছে আসার কারণ কি, সে আমাকে পছন্দ করে নাতো....! তা কি করে সম্ভব! এই অল্প সময়ে পছন্দ করার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া একটা ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠতে অনেক সময় লাগে

হঠাৎ তুষার ফোন করলো আথনুক চমকে উঠে ফোন রিসিভ করতেই তুষার আথনুককে জিজ্ঞেস করলো কিরে তুই কি ছায়াকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসেছিস? নারে দোস্ত! কেন? রাস্তায় যানজটের কারণে বাসায় পৌঁছাতে দেরী হচ্ছে, ... শোন! আম্মু আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলিশ আমি পরে আসবো বুঝতে পেরেছিস? ঠিক আছে বলবো
আথনুকের কথা শুনে ছায়ার ঘুম ভেঙে গেল সে জিজ্ঞেস করলো ভাইয়া কে ফোন করেছে? তুষার ফোন করেছে, কি বলে? আমরা বাসায় পৌঁছাতে পেরেছি কিনা জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি বললেন? যানজটের কারণে বাসায় পৌঁছাতে দেরী হচ্ছে, আমার কথা কিছু জিজ্ঞেস করে নাই? না

এই কথা শুনে ছায়া চুপ হয়ে গেল ছায়ার মুখ দেখে আথনুকের বুঝতে একটুও কষ্ট হলনা ছায়া মন খারাপ করেছে, আথনুক জিজ্ঞেস করলো তুষার তোমার কথা জিজ্ঞেস করে নাই বলে তুমি মন খারাপ করেছো? ছায়া গম্ভীর স্বরে জবাব দিল না, আথনুক ছায়াকে আর কিছু বললো না কারণ আথনুক নিজেও বুঝতে পারছিল না ছায়া কি ধরনের মেয়ে বা সে কি পছন্দ করে
বলতে বলতে রিক্সা বাসার গেটের সামনে চলে এল আথনুক ছায়াকে বললো ছায়া তুমি উপরে যাও আমি এই রিক্সা দিয়েই বাসায় ফিরে যাব, ভাইয়া আপনি উপরে যাবেন না? না, এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে আর দেরি করতে চাচ্ছি না, ঠিক আছে ভাইয়া আল্লাহ হাফেজ, আল্লাহ হাফেজ

আথনুক ছায়াকে নামিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরে আসতে প্রায় রাত দশটা বেজে গেল আথনুক বাসায় ঢুকে তুষার কে ফোন দিল, হ্যালো... তুষার! হ্যা বল, আমি ছায়া কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এইমাত্র আমার বাসায় ঢুকলাম, দোস্ত আম্মু কিছু বলেছে? Sorry দোস্ত আমি উপরে উঠিনি, কেন? অনেক রাত হয়েছে তাই উঠিনি। আথনুক তুষার কে বললো দোস্ত কালকে ফরম পূরন করে রাখিস পরশু দিন জমা দিব কি বলিস? ঠিক আছে

যেদিন ফরম জমা দেওয়ার কথা ছিল সেদিন আর জমা দেওয়া হলনা কারণ ছায়া -দিনের পর থেকে অসুস্থ ছিল
ছায়া অসুস্থ ছিল একথা আথনুক জানত না তুষার ফরম দিতে দেরি করছিল বলে আথনুক তুষারকে ফোন দিয়ে ঝারি দিল কিরে তুষার আমি না তোকে বলছিলাম পরশু দিন ফরম জমা দিব? দোস্ত আমার কি দোষ বল আমিতো আমার ফরম পূরন করে রেখেছি কিন্তু ছায়া অসুস্থর কারণে -ওর ফরম পূরন করতে পারে নাই, অসুস্থ মানে? তুই যেদিন ওকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেলি সেদিন থেকেই ছায়া অসুস্থ তবে এখন অনেকটা ভাল। ছায়ার অসুস্থের কথা শুনে আথনুকের মনটাই খারাপ হয়ে গেল
আজ চৌদ্দ দিন পরে ছায়ার সাথে দেখা হচ্ছে তুষার ছায়াকে নিয়ে আসবে ফরম জমা দেওয়ার জন্য তুষার আথনুককে যে সময় দিয়েছে আথনুক তার আধাঘন্টা আগে এসে বসে আছে। আথনুক ভাবছে আজকে সারাদিন ছায়ার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিবে
ঠিক সারে আটটার দিকে তুষার এবং ছায়া আসলো ছায়াকে দেখে মনে হচ্ছে সে অনেক রোগা হয়ে গেছে, আথনুক তুষারকে কিছু বলার আগেই তুষার বললো তোরা এখানে বসে থাক আমি ফরম জমা দিয়ে আসছি, ঠিক আছে।তুষার ফরম নিয়ে কলেজের ভিতরে চলে গেল

আথনুক ছায়াকে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছো ছায়া? ছায়া কোন উত্তর দিল না, আথনুক আবারো একই প্রশ্ন করলো এবার ছায়া উত্তর দিল ঠিকই কিন্তু অনেক বিরক্তের সাথে, আথনুক ঠিক বুঝতে পারছিল না ছায়ার এত পরিবর্তন হল কিভাবে, যে মেয়েটা নিজে থেকেই হরবর করে সব কথা বলে ফেলে আজকে তাকে এক কথা দুই তিনবার করে জিজ্ঞেস করার পরেও ঠিক মত উত্তর দিচ্ছে না এর কারণ কি! আর হঠাৎ এত চুপচাপ হয়ে গেল কেন
আথনুক ছায়াকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না কারণ আথনুক বুঝতে পারছে ছায়া বিরক্ত বোধ করছে, হঠাৎ ছায়ার ফোন বেজে উঠলো কিন্তু সে রিসিভ করছে না এভাবে যখন দুই তিনবার ফোন বাজলো তখন সে আথনুকের কাছ থেকে একটু দূরে গিয়ে ফোন রিসিভ করে কথা বলছে আথনুক দেখেও না দেখার ভান করে তার মোবাইল কানের কাছে ধরে কথা বলার নাটক করছিল, বেশ কিছুক্ষণ পরে ছায়া এসে বসলো এবার আথনুক ছায়ার থেকে একটু দূরে সরে গেল

এর মধ্যে তুষার ফরম জমা দিয়ে ফিরে এসে আথনুককে বললো দোস্ত ফরম জমা দেওয়ার পালা শেষ এবার তোরা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নে! এটা বলে তুষার আথনুককে বললো দোস্ত এখন তুই ছায়াকে নিয়ে আমার বাসায় যা আমি একটু পরে আসছি, তুষার আথনুককে কিছু না বললেও আথনুক ঠিকই বুঝতে পারলো সে কোথায় যাবে, আথনুক আজ পর্যন্ত তুষারের কোন কথা ফেলে নাই তবে আজকে সে ছায়ার এই দূর ব্যবহারের কারণে তুষারকে না করতে বাধ্য হল, আথনুক তুষারকে বললো sorry দোস্ত আমার শরীরটা খারাপ লাগছে আমি এখন বাসায় ফিরে যাব, তুষার আর কিছু না বলে বললো ঠিক আছে যা, আথনুক ছায়া আর তুষারকে রিক্সায় তুলে দিয়ে মনে অনেক অভিমান নিয়ে নিজের বাসার দিকে রওনা দিল

আথনুককের মনটা অনেক খারাপ কারণ আজকে ছায়া তার সাথে কথা বলে নাই, ঠিক তিনটার দিকে ছায়ার ফোন থেকে একটা এসএমএস আসলো সেটাতে লেখা ছিল" আথনুক ভাইয়া আমি জানি তুমি আমার ব্যবহারে অনেক কষ্ট পেয়েছ কিন্তু বিশ্বাস কর আমি এটা ইচ্ছে করে করিনি please ভাইয়া তুমি কিছু মনে করিওনা" আথনুক এসএমএস এর কোন উত্তর দিল না কারণ সে চাচ্ছে ছায়ার কাছে থেকে দূরে থাকতে
ঠিক আধাঘন্টা পরে আথনুকের ফোন বেজে উঠল আর ফোনটা করেছে ছায়া, আথনুক ফোন রিসিভ করলো হ্যালো... ওপাশ থেকে ছায়া বললো ভাইয়া তুমি কি এখনো আমার সাথে রাগ করে আছো? আথনুক গম্ভীর সস্বরে বললো না, আমার মনে হচ্ছে না, মনে না-হওয়ার কি আছে? না....তোমার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে তুমি এখনো আমার উপর রাগ করে আছো, না আমি রাগ করিনি

আথনুক ছায়াকে জিজ্ঞেস করলো আজকে আমি যখন তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম ছায়া তুমি কেমন আছো তখন তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেনা কেন? আসলে ভাইয়া আমি একটা সমস্যার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম তাই আমার মন খারাপ ছিল আর এই জন্যই আমি তোমার কথার উত্তর দেই নাই, কি সমস্যা? Please ভাইয়া এখন জিজ্ঞেস করিওনা সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে বলবো, আথনুক কিছুটা হলেও অনুভব করতে পেরেছে সমস্যাটা কি! তারপরেও সে চুপ থাকলো কারণ কারো ব্যক্তিগত ব্যাপার যোর করে শোনার অভ্যাস আথনুকের নাই, আথনুক কথা ঘুরিয়ে নিয়ে ছায়াকে বললো শোন! আজেবাজে চিন্তা বাদদিয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ভাল করে ন্যাও বুঝতে পেরেছো? ঠিক আছে নিবো, তাহলে রাখি.... ঠিক আছে রাখো...

আথনুক ফোনের লাইন কেটে দিয়ে যদিও সে কিছুটা অনুভব করতে পেরেছে ছায়ার কি সমস্যা ছিল তারপরও সে আবারও চিন্তা করছে এবং সেই জিনিসটা বারবার তার মনে খোটা দিচ্ছে, আথনুক প্রতিদিন রাতে যখন ঘুমাতে যায় তখন তার মাথায় একই প্রশ্ন ঘুরপাক খায় এবং সে মিলাতে পারেনা ছায়ার সমস্যাটা কি হতে পারে। রাত কেটে যায় কিন্তু আথনুক এটা ভেবে দুটি চোখের পাতা এক করতে পারেনা

খুব শীগ্রই এই গল্পের (পার্ট-) পোস্ট করা হবে এবং পার্ট- তে বিশেষ আকর্শন থাকবে


Coming soon will be posted (Part-4) of this story.

নোট: গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ!!





No comments:

Post a Comment