♥আমার
ভালবাসা বুঝলেনা
♥
আরিফ
জামান
(পাঠ-১০)
রাস্তায় জ্যামের কারণে
তুষারের বাসায় পৌঁছাতে আথনুকের
প্রায় দুই ঘন্টা
লেগে গেলো। গাড়ির হর্ন শুনে ছায়া দোতলা থেকে ছুটে নেমে এলো। আথনুক গাড়ির দরজা খোলার আগেই
ছায়া দরজা খুলে আথনুকের উপর চোখ গরম করে বকাঝকা করলো,
এই তোমার আসার সময় হলো? এত রাতে কে বলেছে তোমাকে আসতে? বাসায় বসে থাকলেই তো পারতে!!
এতো কষ্ট করে কে বলেছে আস্তে শুনি? আথনুক চোখের ইশারায় ছায়াকে বোঝানোর চেষ্টা করলো ছায়া চুপ করো আম্মু
পাশে আছে কিন্তু কে শোনে কার কথা ছায়া এক নিঃশ্বাসে তার মনের রাগ আথনুকের উপর ছেড়ে
দৌড়ে দোতলায় চলে গেলো। আথনুক এবার ভীষণ
বিপদে পড়েছে কারণ আম্মুর সামনে ছায়া তাকে যেভাবে বকাঝকা করলো এতে আম্মু ধরেই নিবে আমাদের
মধ্যে কিছু আছে। যেই কথা সেই কাজ!!
আম্মু বললো বাব্বাহ!! কিরে আথনুক কতদিন ধরে এইসব চলছে? আমি তোর মা হয়ে যা করতে পারিনি আজ ছায়া
সেটা করে দেখালো। তবে আথনুক তুই যাই বলিস আর না বলিস বউ হিসেবে ছায়াকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আথনুক একটু রাগ করে বললো আম্মু
তুমি চুপ করতো তুমি যা ভাবছ আসলে তা নয়, তাহলে এতক্ষণ এগুলো কি ছিল? আথনুক আবার বললো আম্মু তুমি কি
এখানে বসে বসে আমার সাথে গল্প করবে না উপরে যাবে শুনি? উপরেতো যাবই কারণ উপরে না গেলে
তোদের দুজনের বিয়ের কথা পাকা পাকি করবো কিভাবে শুনি? উফফ!! আম্মু আমি ছায়াকে পছন্দ
করি ঠিকই কিন্তু মনে মনে, আমি আজ পর্যন্ত ছায়াকে বলতে পারিনি “ছায়া আমি তোমাকে ভীষণ
ভালোবাসি” আথনুক জানেনা তার মা তার মুখ থেকে সত্যি কথাটি শোনার
জন্য তাকে পরীক্ষা করছে। আথনুক ছায়াকে সত্যি ভালোবাসে
কিনা, আথনুক রাগের মাথায় মুখ ফসকে বলে ফেলেছে সে ছায়াকে ভীষণ
ভালোবাসে।
আথনুক এবার লজ্জায় তার উঁচু মাথাটা নিচু করে বিড়বিড়
করে বললো আম্মু এবার চলো উপরে যাই নয়তো ছায়া আরো রেগে যাবে। হ্যা তাই চল! আথনুক সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল দিতেই তার
চোখে পড়ল দরজা হালকা খোলা আথনুক ভাবল ছায়া হয়তোবা রাগ করে দরজা
লাগাতে ভুলে গিয়েছে তাই সে দ্বিতীয়বার বেল না দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো। আথনুক ভিতরে প্রবেশ করে একটু অবাক হয়ে গেল কারণ বাসার
সমস্ত লাইট অফ! আথনুক ভাবলো হয়তোবা কারেন্ট চলে গিয়েছে তাই সে
তুষারকে ডাক দিলো তুষার…… বাসার লাইট অফ কেন? কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ এলোনা। এবার
সে ছায়াকে ডাক দিলো ছায়া…… তোমরা সবাই কোথায়? এতেও কোনো সাড়া
শব্দ এলোনা। আথনুক এবার একটু সামনের দিকে এগোতেই বাসার সমস্ত লাইট
জ্বলে উঠলো এবং সেই সাথে বাসার সবাই ডাইনিং টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে ডাইনিং টেবিলের উপরে
রাখা বিশাল একটি কেক রেখে “Happy Birthday to Athnuk” এই স্লোগান দিয়ে আথনুক কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো। এবং
ছায়া সবাইকে চুপ করতে বলে নিজে একটি স্পেশাল ভাবে শুভেচ্ছা জানাতে একটি কবিতা আবৃত্তি পাঠ করলো।
“জন্মদিন, শুভ জন্মদিন !! ফুলেরা ফুটেছে হাসি মুখে, বাড়ছে ভ্রমরের গুঞ্জন, পাখিরাও গাইছে নতুন সুরে জানাতে তোমায় অভিনন্দন ! নদীতে বইছে খুশির জোয়ার বাতাসে সুবাসিত কলরব, তোমাকে নিয়েই মাতামাতি আজ তোমার জন্যই সব ! জীবনে হও অনেক বড় পৃথিবীকে করো ঋণী, গাইবে সবাই তোমার জয়গান রাখবে মনে চিরদিনি। জীবন হোক ছন্দময় স্বপ্নগুলো রঙিন, ভালোবাসায় ভরে উঠুক তোমার জন্মদিন ! জন্মদিন শুভ জন্মদিন !!”
আথনুক এরকম আয়োজন দেখে অবাক হয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানালো। আথনুক সবাইকে ধন্যবাদ দিতেই ছায়া বললো
তুমি আমাদেরকে ধন্যবাদ না দিয়ে বরং তুমি তোমার আম্মুকে মানে আন্টিকে ধন্যবাদ দাও আন্টি
যদি আমাদের কে সাহায্য না করতো তাহলে এই সমস্ত আয়োজন করা সম্ভব হতনা। আথনুক মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল আম্মু আমি জানতাম তুমি আমার জন্মদিন
কোনোদিন ভুলবেনা কিন্তু এটা জানতাম না যে এদের সাথে মিলে এতো বড়ো আয়োজন করবে “I
Love you MOM” হয়েছে আর মায়ের দরদ দেখাতে হবেনা এবার চল কেক কাটবি সবাই অপেক্ষা করছে!
আথনুক কেক কেটে প্রথমে তার মায়ের মুখে ছোট্ট একটি টুকরো দিলো। আথনুক যখন তার আম্মুকে কেক খাওয়াচ্ছিল তখন তার মা তাকে বার বার ইশারা
দিচ্ছিলো ছায়াকে কেক খাওয়ায় দিতে। আথনুক একটি কেকের পিচ হাতে নিয়ে ছায়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে
ছায়াকে কেক খাওয়ায় দিয়ে বললো আচ্ছা! একটা জিনিস বুঝতে পারছিনা ছায়া তুমি নিছে আমাকে
দশ মিনিট ধরে যে বকাঝকা করলে সেগুলো কি নাটক ছিল? ছায়া একটি কেকের পিচ হাতে নিয়ে আম্মুককে
খাওয়াতে গিয়ে আথনুকের গালে কেকের ক্রিম মেখে দিয়ে বলবো না বলে
লম্বা করে জিব্বা বের করে মুখ ভেংচি মেরে তার রুমের দিকে দৌড় দিল। আথনুক ছায়ার পিছু পিছু তার রুমে প্রবেশ করলো।।
No comments:
Post a Comment