Friday, September 28, 2018



আমার ভালোবাসা বুঝলেনা

আরিফ জামান

(পাঠ-)


আথনুক আজকে অনেক খুশি কারণ তার ভালোবাসার মানুষটি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে আগামীকাল বাসায় ফিরে যাবে। তাছাড়া আথনুক আজকে ছায়াকে নিজের হাতে সুফ খাইয়ে দিয়েছে। আথনুক যদিও হাসপাতালে ছায়ার সেবা যত্ন করতে কম করেনি সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ছায়ার দাত ব্রাশ করার পানি এনে দেওয়া, টাইম টু টাইম ছায়াকে খাবার খাওয়া, সে ঔষধ খেয়েছে কিনা সেদিকে লক্ষ রাখা, আরো কতো কিছু কিন্তু আথনুক তারপরও কখনো বিরক্ত বোধ করেনি কারণ সে ছায়াকে ভিশন ভালোবাসে

এই তুষারটা যা করেনা আথনুক মাঝে মধ্যে ওর কান্ড কলাপ দেখে রেগে গিয়েও নিজেকে আবার সামলে নেয় কারণ আথনুক জানে তুষারকে বকাবকি করেও কোন লাভ হবেনা তাই সে বকাবকি করে না। আথনুক হাসপাতালে আসার প্রায় দের ঘন্টা হয়ে গেল সেই কখন সে নিচে গিয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত আসার কোন খবর নাই
এর মধ্যে একজন ডাক্তার ছায়ার কেবিনে ঢুকে পরলো ছায়াকে দেখার জন্য। ডাক্তার সাহেব ছায়াকে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছেন আপনি? জ্বী ভাল, ঔষধ গুলো ঠিক মত খাচ্ছেন তো? জ্বী খাচ্ছি, ডাক্তার সাহেব ছায়ার কাগজ পত্র দেখে আমাকে বললো ওনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আপনারা চাইলে আগামীকাল সকালে ওনাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন, জ্বী আচ্ছা। ডাক্তার সাহেব এই কথা বলে ছায়ার কেবিন থেকে বিদায় নিলেন

আথনুক মনে মনে ভাবছে তুষার একটা ফোন দিয়ে ছায়ার discharge খবরটা জানিয়ে দিলে কেমন হয় তাই আর দেরি না করে তুষারকে ফোন দিল হ্যালো তুষার? হ্যা বল, তুই কোথায়? আমি বাসার কাছে চলে এসেছি তাই আমি আজকে আর হাসপাতালে যাবোনা একবারে কাল সকালে আসবো, আচ্ছা... শোন! কিছুক্ষণ আগে ডাক্তার এসে ছায়াকে দেখে গিয়েছেন এবং বলেছেন ছায়া এখন সুস্থ আমরা চাইলে আগামীকাল সকালে ছায়াকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো, তাই? হুম, ঠিক আছে তাহলে তুই সবকিছু ঠিকঠাক করে রাখিস আমি সকালে গাড়ী নিয়ে আসবো, ঠিক আছে বাই

আথনুক ফোন কান থেকে নামতেই ছায়া আথনুক কে জিজ্ঞেস করলো কি ব্যাপার আথনুক তুষার কোথায় আর আসবেনা? না বাসায় চলে গিয়েছে, ছায়া চুপ হয়ে গেল, আথনুক বুঝতেছে তুষারের এই ব্যবহারে ছায়া মোটেও খুশি না, আথনুক ছায়াকে জিজ্ঞেস করলো কি মন খারাপ? না, মন খারাপ করবো কেনো, আসলে আপন মানুষ গুলো যদি এরকম করে তাহলে কি আর করার বলো.... কেন আমাকে কি আপন মনে হয়না আমি কি পর? ছি ছি আথনুক যে বলোনা তুমি.... তুমি আমার জন্য যে কষ্ট করেছো এরকম কষ্ট খুব কম আপন মানুষ করে, হয়েছে কথা কম বলে এবার ঔষধ গুলো খেয়ে নাও আমি তোমার discharge এর ব্যাপারে নার্সের সাথে কথা বলে আসছি ঠিক আছে? আচ্ছা ঠিক আছে। আথনুক ছায়াকে ঔষধ খাওয়াই দিয়ে নার্সের রুমে চলে গেল

আথনুক নার্সের সাথে কথা বলে আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো কারণ সে কথা বলার পরে রাতের খাবার খেতে হাসপাতালের ক্যান্টিনে গিয়েছিল। আথনুক যখনি ছায়ার কেবিনে প্রবেশ করে তখনি সে দরজা নক করে প্রবেশ করে কিন্তু আজকে সে নক করলো না কারণ আথনুক ভাবলো আমার দেরি হওয়ার কারণে ছায়া হয়তো বা ঘুমিয়ে পড়েছে এটা ভেবে সে দরজা নক না করে কেবিনে প্রবেশ করলো। আথনুক কেবিনে প্রবেশ করে দেখলো তার ধারণা ঠিক ছায়া ঘুমিয়ে পড়েছে
আথনুক ছায়ার কাছে এগিয়ে যেতেই তার চোখ পরলো ছায়ার ঘুমন্ত মায়াবী মুখের উপর। আথনুক যেন এক মহুর্তের জন্য তার দৃষ্টি সরিয়ে নিতে পারছেনা। আথনুক নিজেকে প্রশ্ন করছে এটাই কি সেই মেয়ে? যাকে সে মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসে। এটাই কি সেই মেয়ে? যাকে সে শয়নে স্বপ্নে তার মনে রাজকন্যার স্থান দিয়েছে। এটাই কি সেই মেয়ে? আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে আমার ভালোবাসার মানুষ হয়ে আমার বুকে লুকিয়ে থাকবে। আথনুক অনেক কষ্টে তার দৃষ্টি ছায়ার মুখ থেকে সরিয়ে নিয়ে ছায়ার গায়ে চাদরটা টেনে দিতে গেল কিন্তু ছায়া পাশ ঘুরে ঘুমন্ত অবস্থায় আথনুকের হাতটা তার বুকে চেপে ধরলো

আথনুকের শরীর কেঁপে উঠলো। আথনুক যদিও এখন পর্যন্ত ছায়াকে তার ভালোবাসার কথা কিছুই বলতে পারেনি তারপরও তার ভালোবাসা তার কাছে ফুলের মত পবিত্র তাই সে অনেক কষ্টে তার হাত ছায়ার বুক থেকে সরিয়ে নিলো। তাছাড়া আথনুক চায়না তার ভালোবাসা অপবিত্র হয়ে যাক। আথনুক ইজি চেয়ারে বসে মনে মনে ভাবছে ছায়া কখনো তার ভালোবাসার কথা জানার পর যদি সে তার ভালোবাসাকে প্রত্যাখান করে তারপরও সে তার ভালোবাসাকে অপবিত্র করবেনা

ইজি চেয়ারে বসে আছে আথনুক তার চোখে ঘুম নেই। তার মাথায় শুধু ছায়ার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কবে সে ছায়াকে তার ভালোবাসার কথা জানাবে আর জানালে ছায়া তার ভালোবাসাকে গ্রহণ করবে কিনা, আর যদি গ্রহণ করে তাহলে ছায়াকে নিয়ে সে কোথায় ঘুরতে যাবে, এরকম নানা প্রশ্ন তার মাথাটা খারাপ করে দিচ্ছে। আথনুকের চোখে ঘুম নেই সে এইসব কথা ভেবে একবার হাসপাতালের বারান্দার এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত পায়চারি করছে আবার কখনো ইজি চেয়ারে বসে পরছে। আথনুক এখন শুধু সকাল হওয়ার অপেক্ষায় ইজি চেয়ারে বসে রইল।


নোট: গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ!!


No comments:

Post a Comment