♥আমার ভালবাসা বুঝলেনা
♥
আরিফ
জামান
(পার্ট-১৭)
ছেলে যদি কোনো কারণে কষ্ট পায় তাহলে সেটা সর্ব প্রথমে মায়ের মন জানতে পারে তার ছেলে কষ্টে আছে। গতকাল
আথনুক যখন ছায়াকে ছেড়ে আসছিল তখনই আথনুকের
মা তার ছেলের চোখ মুখ
দেখেছে বুঝতে পেরেছিলো আথনুকের মন ভালো নেই। ছেলের
মন যদি ভালো না থাকে তাহলে কোনো মা রাতে দু চোখের পাতা এক করতে পারে? মোটেও না! ঠিক
তেমনি “আয়শা বেগম” আথনুকের মা দু চোখের পাতা এক করতে পারে নাই। যদিও তিনি অন্যের মত বারবার ছেলের রুমে গিয়ে দেখে নাই
শুধু একা রুমে বসে ছেলের কষ্ট গুলোকে হজম করেছেন। আথনুকের মা রাতে কয়েকবার ছেলের রুমে গিয়ে ছেলেকে
সান্তনা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু সাহস পাননি কারণ আথনুক সহজে রাগ
কন্ট্রোল করতে পারে না।
আথনুক বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে কফির কাপ পাশে রেখে চেয়ারে হেলান
দিয়ে মাথার চুল গুলো টানছে।পিছন থেকে
“আয়শা বেগম” আথনুকের মাথায় হাত রাখতেই আথনুক
চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। আম্মু তুমি ঘুমাও নাই?
আথনুকের এই প্রশ্নের উত্তরে “আয়শা বেগম” বললেন আমার ছেলে আমার হবু বৌমার
কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দিয়ে সারারাত জেগে থাকবে আর আমি ঘুমাবো এটা কি করে হয়? আথনুক
তার কষ্ট লুকানোর চেষ্টা করলো, আম্মু তুমি সকাল বেলা কি শুরু করে দিলে বলতো? আমি রাতে
ঘুমাইনি এটা
তোমাকে কে বলেছে শুনি? “আয়শা
বেগম” বললেন, আমি তোর “মা” তোর চোখ বলে দিচ্ছে তুই সারারাত জেগে ছিলি। আথনুক ভালো করে জানে সে সবার চোখে ফাঁকি দিতে পারবে কিন্তু তার মায়ের চোখে ফাঁকি দিতে পারবেনা
আথনুক মাথা নিচু করে ফেললো।
“আয়শা বেগম” ছেলেকে
সান্তনা দিয়ে বললো রাতে নাহয় ছায়ার সাথে তোর একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে এই জন্য সারারাত
জেগে এভাবে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয়? বোকা ছেলে……..। আথনুক “মা”কে ইজি চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজে ফ্লোরে বসে মায়ের কোলে মাথা
রেখে জ্বল জ্বল চোখ নিয়ে তার বুকের ভিতর লুকিয়ে রাখা কষ্ট গুলো মায়ের কাছে এক এক করে
বলতে লাগলো। “আয়শা বেগম” ছেলের কথা শুনে ছেলেকে সান্তনা
দিয়ে বললো বোকা ছেলে……..শোন! প্রতিটি মেয়ে চায় তার ভালোবাসার মানুষটি
আগে তাকে প্রেম নিবেদন করুক। তাছাড়া মেয়েরা ছেলেদের মত না। ছেলেরা যে রকম খুব সহজে মনের কথা খুলে বলতে পারে মেয়েরা তা পারেনা
কারণ! মেয়েরা হলো লজ্জাবতী গাছের মত সহজে মনের কথা খুলে বলতে পারেনা।
তবে মেয়েরা মুখে প্রকাশ না করে বিভিন্ন ভঙ্গিতে তার ভালোবাসার মানুষটিকে বুঝানোর চেষ্টা
করে সে তাকে ভালোবাসে। এদের মধ্যে যারা বুঝতে পারে তারা ভালোবাসা
জয়লাভ করে আর যারা বুঝতে পারেনা তাদের অবস্থা তোর মতো হয়। “আয়শা
বেগম” এই কথা বলে হেসে উঠলেন।
আথনুক মায়ের কোল থেকে মাথা তুলে বললো আম্মু আমি এবার কিন্তু রেখে
যাবো!! “আয়শা বেগম” Sorry
বলে বললো আচ্ছা বাবা আর মজা করবোনা…..!
এবার কি আমি জানতে পারি আমার ছেলে কিসের জন্য এত কষ্ট পাচ্ছে? আথনুক আবার মায়ের কোলে মাথা রেখে বললো
আম্মু আমি গতকাল রাতে একটা কাজ করেছি জানিনা কাজটি ঠিক করেছি নাকি ভুল করেছি। “আয়শা
বেগম” কি করেছিস?
আম্মু আমি গতকাল রাতে এসএমএস এর মাধ্যমে ছায়াকে বলেছি আমি তাকে
ভীষণ ভালোবাসি কিন্তু এখন পর্যন্ত ছায়া এসএমএস এর কোনো উত্তর দিলনা ভীষন চিন্তা হচ্ছে!!
“আয়শা বেগম” যদিও কিছুটা আন্দাজ
করতে পেরেছে তারপরও ছেলেকে খুশি করার জন্য বললো ধুর বোকা! এই সামান্য জিনিসের জন্য
তুই চিন্তা করছিস? বোকা ছেলে……..শোন! এটাই তো মেয়েরা চায……. তার ভালোবাসার মানুষটি
আগে তাকে প্রেম নিবেদন করুক!! তুই শুধু শুধু চিন্তা করছিস। আম্মু কিন্তু ছায়া এখনো এসএমএস এর কোনো উত্তর দিচ্ছে না কেন? “আয়শা
বেগম” আরে বোকা….. মেয়েটাকে একটু ভাবতে সময় দে!
তাছাড়া কালকে তুই ছায়ার সাথে যে বেবহার করেছিস কে জানে হয়তোবা ছায়া এই জন্য তোর সাথে
রাগ করে আছে, আবার এটাও হতে পারে ছায়া এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই, অপেক্ষা কর! ফ্রেশ হয়ে
নাস্তা পানি খেয়েনে দেখবি ছায়া ঠিক তোর এসএমএস এর উত্তর দিবে।
আথনুকের আর অপেক্ষা সহ্য হচ্ছেনা কারণ দেখতে দেখতে
সকাল ১০ টা বেজে গেলো কিন্তু ছায়া এখন পর্যন্ত এসএমএস এর কোনো উত্তর দিলনা। আথনুক ফোন হাতে নিয়ে ছায়ার নাম্বারে কল
দিলো কিন্তু ফোন সুইস অফ বলছে, আথনুক আবার ট্রাই করলো কিন্তু ফোন বন্ধ। এবার আথনুকের টেনশন আরো বেশি
বেড়ে গেলো। আথনুক
এবার তুষারের নাম্বারে ফোন দিলো কিন্তু কোনো লাভ হলোনা তুষারের নাম্বারও বন্ধ। আথনুক ভাবলো আর দেরি করা ঠিক হবেনা যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব তুষারের বাসায় তাকে যেতে হবে।
তড়িঘড়ি করে কোন রকম একটা শার্ট পরে বাইকের চাবি নিয়ে
তুষারের বাসার উদ্দেশে রওনা দিলো।।
No comments:
Post a Comment