Saturday, September 29, 2018




আমার ভালবাসা বুঝলেনা

আরিফ জামান

(পার্ট-২১)


কেউ ভালোবাসা চেয়েও পায়না আবার কেউ সত্যিকারের ভালোবাসা হাতের কাসে পেয়েও হাতছাড়া করে ফেলে আথনুক ছায়াকে এত পরিমান ভালোবাসে সে তার চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে কিন্তু! ছায়া তার ভালোবাসার বিন্দু মাত্র মূল্য দিলোনা আমি বুঝতে পারছি না ছায়া এত বড় ভুল কিভাবে করতে পারে! কারণ আমার জানা মতে আথনুক ছায়াকে যে পরিমান ভালোবাসে সেই পরিমান ভালোবাসা আর কেউ তাকে দিতে পারবে নাকিন্তু! ছায়া আথনুকের সাথে এটা কেন করলো? শুনেছি ভালোবাসা অন্ধ হয়ে যায় কিন্তু আজ এর সত্যিটা জানলাম এবং স্বচক্ষে দেখলাম ভালোবাসা অন্ধ নয় ভালোবাসা নামের মানুষ গুলো অন্ধ হয়ে যায় রামিশা আথনুকের মাথা বুলিয়ে দিতে দিতে একটু সময়ের জন্য ভাবনার দেশে হারিয়ে গিয়েছিল আথনু হঠাৎ করে রামিশাকে ডাক দিয়ে বলল আপু আপনি না বলেছিলেন আমি রেস্ট করার পর আপনি আমাকে ছায়ার খবর দিবেন? রামিশা মুখে কিছু না বলে শাড়ির আঁচল থেকে ছায়ার লেখা চিঠিটা আথনুকের হাতে দিয়ে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে গেল কারণ চিঠি পড়ার সময় আথনু যখন কষ্ট পেয়ে চোখের জল ঝরাবে তখন সেই দৃশ্য রামিশা দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবেনা

রামিশা চিঠি দিয়ে চোখের পানি ফেলে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যাওয়া আথনুকের  কাছে বেশি একটা সুবিধা মনে হলোনা  যে মানুষ নিজেই আমাকে বললো ছায়ার খোজ খবর দেবে সেই মানুষের এরকম আচরণ মোটেও সুবিধাজনক নয় আথনুক ছায়ার লেখা চিঠিটা খুললো কিন্তু চিঠি খুলে যে দৃশ্য দেখতে পেলো তার জন্য মোটেও সে প্রস্তুত ছিলোনা আথনুক চিঠি খুলে প্রথমেই তার নজরে পড়লো ছায়ার “Handwriting” আথনু Handwriting দেখে বুঝতে পারলো এটা ছায়ার হাতের লেখা ছায়ার  ছায়ার হাতের লেখা অনেক সুন্দর ছায়া তার নরম কোমল হাত দিয়ে হাত টিপে টিপে এতোই সুন্দর করে লিখতে পারে যে, সে, পরীক্ষার সময় শুধু হাতের লেখার জন্য এক্সট্রা নাম্বার পায়




“ছায়ার চিঠি”

প্রিয় আথনু,
জীবনে প্রথম চিঠি লিখছি চিঠির ভাষা কেমন হয় আমার জানা নাই তবুও লেখার চেষ্টা করছি ভুল হলে ক্ষমা করে দিও আথনু আমি জানি তুমি এই চিঠি পরে ভীষণ কষ্ট পাবে কিন্তু তার পরও আমার বুকে দীর্ঘদিনের জমে থাকা না বলা কথা যে গুলো সামনে থেকে তোমাকে বলতে পারিনি আজ চিঠির মাধ্যমে প্রাণ খুলে তোমাকে বলতে চাই এবং আমার কথা তোমাকে মন দিয়ে শুনতে হবে আথনু শৈশব কালে আমার আব্বু আম্মু আমাকে ছেড়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পর আমার খালা মনি মানে “তুষারের আম্মু” আমাকে লালন পালন করেন আমি যখন একটু একটু বুঝতে শিখলাম তখন আমার খালা মনি আমাকে স্কুলে দিতে চাইলে আমার খালু  খালা মনিকে নিষেধ করে খালু বলেন নিজের ছেলে/মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে আবার অন্যের মেয়ের লেখাপড়ার খরচ কোথা থেকে জোগাড় করবো শুনি? বাসায় বসে তিন বেলা খেতে পাচ্ছে এটাইতো অনেক আবার লেখাপড়া করার চিন্তা করছে!! ওকে বোলো লেখাপড়ার চিন্তা বাদ দিয়ে বরং তোমার সাথে বাসার কাজে হাত বাটাতে এতে তোমার উপকার হবে

খালুর সেদিনের কথাতে আমি ভীষণ কষ্ট পেয়ে ছিলাম আমাকে নিয়ে খালা মনি খালুর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হয় খালু যখন খালা মনির সাথে ঝগড়া করে তখন নিজেকে বড় অসহায় মনে হত মনে হত এই সংসারে আমি বোঝা হয়ে আছি এক এক সময় মনে হতো আত্মহত্যা করি কিন্তু, যখন ভাবি আত্মহত্যা করা মহা পাপ তখন পিছে হাটি খালুর সেদিনের কথা আজও যদি মনে পরে তাহলে বুক ফেটে কান্না আসে মনে হয় বাসা থেকে বের হয়ে যাই কিন্তু পারিনা, কারণ আমার প্রথম দুর্বলতা হলো আমি একজন এতীম” এবং দ্বিতীয় দুর্বলতা হলো আমি একজন মেয়ে” মানুষ খালা মনি খালুর সাথে ঝগড়া করার পরেও আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দেয় এইটা খালু জানতে পেরে খালা মনির সাথে ঝগড়া শুরু করে সেদিন হঠাৎ করে আমার আপন চাচাতো ভাই রবিন” বাসায় আসে খালা মনি পুরো বিষয়টি রবিনকে জানালে রবিন খালা মনিকে বলে এখন থেকে ছায়ার সমস্ত খরচ আমি বহন করবো এবং আমি ছায়াকে আপনাদের কাছে আমানত হিসাবে রেখে গেলাম ভবিষ্যতে আমি ছায়াকে বিয়ে করে আমার স্ত্রীর মর্যাদা দেবো তখন থেকে রবিন প্রতি মাসে আমার ভরন পোষন দেয় শুধু তাই নয়, আমি যখন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম তখন হাসপাতালের বিল রবিন দিয়েছিল রবিন যেদিন খালা মনিকে বলেছিলো সে ভবিষ্যতে আমাকে বিয়ে করবে সেদিন থেকে আমি ধরে নিয়েছি এই পৃথিবীতে কোনো ব্যক্তিকে আমার ভালোবাসার অধিকার নেই আমি এখন একটি পুতুল সে আমাকে যেভাবে চালাবে আমাকে সে ভাবেই চলতে হবে

আথনু এখন তুমিই বলো যে মানুষটি আমার ভরন পোষন দিয়ে বিয়ে না করেও আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছে তাকে ছেড়ে আমি কিভাবে অন্য আর একজনের কথা চিন্তা করি বা ভালোবাসি বল ? আথনু আমি অস্বীকার করছিনা তুমি দিন রাত হাসপাতালে আমার সেবা যত্ন করেছো শুধু তাই নয়, তুমি যখন হাসপাতালে আমার সেবা যত্ন করতে তখন কিছু সময়ের জন্য আমার মনে হতো আমি স্বর্গের সুখ পেয়েছি এবং আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু যখন মনে হয় “আমি একজনের খাঁচা বন্দি পাখি” আমার কাউকে ভালোবাসার অধিকার নাই আমি তখন ভালোবাসাকে দূরে সরে দেই আথনু আমি তোমাকে এই কথা গুলো আরো আগে বলতে চেয়েচিলাম কিন্তু ভয়ে বলতে পারি নাই কি জানি তুমি দূরে সরে যাও!! আথনু আমি জানি তুমি আমাকে ভীষণ ভালোবাসো কিন্তু এই এতিম মেয়েটার কিছুই করার নাই কারণ আমি পরিস্থিতির শিকার “আমি একজনের খাঁচা বন্দি পাখি”

আথনু তুমি যখন আমাকে এসএমএস করে ভালোবাসার কথা বলেছো তখন রবিন আমার বাসায় তুমি গতকাল বাসা থেকে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর রবিন আমাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে দুবাই থেকে তার গ্রামের বাড়ি না গিয়ে সরাসরি আমার বাসায় চলে এসেছে আজকে সে আমাকে তার দেশের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে আগামীকাল ঠিক দুপুর ১২:০০ টা সময় রবিনের সাথে আমার বিয়ে আথনু আমি জানি এই কথা শুনে তুমি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছ কিন্তু তার পরও আমি বলবো এই হতভাগী এতিম মেয়েটির জন্য দোয়া করিও এবং পারলে আমাকে ভুলে গিয়ে ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে নতুন করে ঘর সংসার শুরু কর

আথনু মনের কথা লিখতে গেলে কলমের কালি শেষ হয়ে যাবে কিন্তু মনে জমে থাকা কথা গুলো লেখা শেষ হবেনা তাই আর বেশি কিছু লিখবোনা কারণ আমি যতই লেখবো তুমি ততই কষ্ট পাবে আর আমি চাইনা তুমি কষ্ট পাও তাই এখানেই বিদায় নিচ্ছি।।
“ইতি তোমার ছায়া”

খুব শীগ্রই এই গল্পের (পার্ট-২২) পোস্ট করা হবে এবং পার্ট-২২ তে বিশেষ আকর্শন থাকবে


Very soon will be posted (Part-22) of this story.



নোট: গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ!!



No comments:

Post a Comment