Saturday, September 29, 2018




আমার ভালবাসা বুঝলেনা

আরিফ জামান
(পার্ট-২৭
)


খুব অল্প বয়সে রামিশার বিয়ে হয়েছিল, রামিশার যখন ১৮ বছর তখন পারিবারিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আহনাফ এর সাথে তার বিয়ে হয়েছিলরামিশার বয়সের থেকে আহনাফ এর বয়সের ভালোই ব্যবধান ছিলআহনাফ রামিশার থেকে প্রায় আট বছরের বড় ছিলআহনাফ এর সাথে বয়সে এরকম ব্যবধান হওয়ার কারণে বিয়ের পর রামিশা আহনাফ এর সাথে সব কিছু শেয়ার করতে কষ্ট হতকিন্তু চোখের লজ্জা আর স্বামীর আত্মসম্মান এর ভয়ে কষ্ট হলেও মুখ বুজে সবকিছু মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায়ও ছিল নাবিয়ের পর প্রথম দিকে কষ্ট হলেও কিছু দিনের মাথায় যখন রামিশার আহনাফ এর ঘরে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান “আয়রা” জন্ম গ্রহণ করে তখন নিমিষেই রামিশার সব দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যায়আহনাফ এবং রামিশার ঘরে আয়রা আসার পর রামিশা ভুলেই গিয়েছিলো তার এত কম বয়সে বিয়ে হয়েছিলআয়রা তাদের জীবনে আসার পর রামিশা যখনি দুঃখের দিন গুলো পার করে সুখের সন্ধানে পৌঁছালো ঠিক তখনই রোড এক্সিডেন্টে আহনাফ রামিশার জীবন থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় হয়ে গেলমেয়েটি সারাজীবন শুধু কষ্ট পেয়ে গেলো সুখ কি জিনিস সেটা আর বুঝলোনা

রামিশা আপু…. এই রামিশা আপু! শুনছেন? রামিশা আপু সেহেরি খাবেন না ? উঠেন! দরজা খুলেন! আমি আপনাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছি রামিশা বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়লোমনে হচ্ছে রিনা সেহরি খাওয়ার জন্য বাহিরে থেকে ডাকছেরামিশা ভেতর থেকে জবাব দিল হ্যাঁ আপু দরজা খুলছি ঘরের লাইট বন্ধ থাকাতে ঘড়িটাও ঠিক মত দেখা যাচ্ছে নারামিশা বিছানা থেকে উঠে লাইট জ্বালালো আথনু ফ্লোরে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছেরামিশা আথনু-কে ডাক দিলোএই আথনু! ফ্লোর থেকে উঠে বিছানায় যাও রিনা আমাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছেআথনু লাফ দিয়ে উঠে চাদর মুড়ি দিয়ে আবার বিছানায় আবার শুয়ে পড়লোরামিশা ঘরের দরজা খুলে দিলোরিনা একে একে সব খাবার টেবিলের উপর রেখে চলে যাওয়ার সময় বলে গেল আপু তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন সময় নাইরিনা চলে যাওয়ার পর রামিশা বন্ধ করে দিল বন্ধ করে দেয়ার পর একটা জিনিস রামিশা কিছুতেই বুঝতে পারছে না কিছুক্ষন আগে আথনুকে এর সাথে যে ঘটনা-টি ঘটেছে সেটা স্বপ্ন ছিলো না-কি সত্যি ঘটেছেস্বপ্ন না সত্যি এই সন্দেহটি দূর করার জন্য রামিশা তার নিজের হাতে নিজেই জোরে চিমটি কাটলোরামিশার হাতে ব্যথা অনুভব হলো এবং সে নিচ্চিত হলো সে স্বপ্ন দেখেছেরামিশা নিচ্চিত হওয়ার জন্য ঘরের জানালা খুলে বাহিরে তাকিয়ে দেখলো বাহিরে বৃষ্টি হয়েছে কিনা শুধু তাই নয় রামিশা বাথরুমে গিয়ে দেখলো বালতিতে করে সে আথনুকে এর মাথায় পানি দিয়েছে কিনাপরিশেষে রামিশা বুঝতে পারলো আথনু আর তার মধ্যে যা কিছু ঘটেছে সেটা একটি দুঃস্বপ্ন ছিলরামিশা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো, এবং মনে মনে মহান আল্লাহ পাকের কাছে ফানা চাইলো এই রকম দুঃস্বপ্ন তার জীবনে যেন আর না আসে


রামিশা বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে আথনু-কে ডাক দিলোআথনু বিছানায় শোয়া অবস্থায় রামিশাকে জিজ্ঞেস করলো কটা বাজে ? রামিশা মোবাইল হাতে নিয়ে ঘড়ি দেখে বলল 03:40 am, বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে গেলরামিশা আথনু এর জন্য খাবার বেড়ে নিজের প্লেটে খাবার বাড়লোআথনু বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে রামিশাকে বসে থাকতে দেখে বলল বসে আছো কেন তুমি? তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও সময় নাইআথনু ভাত খেতে বসেছে রামিশা আথনুকে এর মুখের দিকে তাকিয়ে সেই দুঃস্বপ্নের কথা ভাবছেরামিশা স্বপ্নে দেখেছিল আথনুকে এর শরীরে ভীষণ জ্বর, বলতে গেলে তার কোন হুশ ছিল না কিন্তু এখন তাকে দেখে অনেক ফ্রেশ লাগছেখাবার শেষ করে আথনু বিছানায় গিয়ে বসলোরামিশা আথনু-কে জিজ্ঞেস করল রাতে ঘুম পুরা হয়েছে না হয় নাই? কেন হবে না! অবশ্যই হয়েছে, মাটিতে ঘুমানোর অভ্যাস আছে ? বোকা মেয়ে মাটিতে ঘুমানোর জন্য অভ্যাস এর প্রয়োজন হয় না কারণ মরার পর শুধু আমি না সবাকে একদিন মাটিতে শুতে হবে বুঝতে পেরেছো ? তা ঠিক বলেছো কিন্তু তারপরও অচেনা জায়গায়, অচেনা ঘরে, সহজে ঘুম ধরে ? তাহলে শোনো, আমি যতক্ষন পর্যন্ত জেগে আছি ততক্ষণ পর্যন্ত এই ঘরটি আমার কাছে অচেনা কিন্তু আমি যখনি দুচোখের পাতা এক করে ফেলবো মানে ঘুমিয়ে পড়বো তখন আমার কাছে চেনা অচেনার কিছুই থাকবে নাএবার আথনু রামিশাকে জিজ্ঞেস করল রাতে তোমার ঘুম পুরা হয়েছে? আথনু এর এই প্রশ্নের জন্য রামিশা মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা তাই সে একটু চমকে উঠলো

রামিশা কথা ঘুরিয়ে আথনু-কে জিজ্ঞেস করলো আমরা সকলে কখন বের হবো ? করিম চাচা আমাদের জন্য এত কিছু করেছেন ইচ্ছে করলেই এখান থেকে যাওয়া যাবে না, আগে সকাল হোক তারপর না-হয় সবার সাথে কথা বলে বের হবোআথনু এই কথা বলে চাদর নিয়ে বিছানা থেকে নেমে মাটিতে শুতে গেলো কিন্তু চোখের লজ্জা আর মনের বিশ্বাসের কারণে রামিশা আথনু-কে বললো সকাল তো হয়েই গেল এখন মাটিতে না শুয়ে তুমি বরং বিছানায় শুয়ে পরোরামিশার এই আজগুবি কথা শুনে আথনু হাহাহাহা করে হেসে উঠলো এবং বললো শোন এখন সময় 04:36 am এখনো সকাল হতে এবং আমরা বের হতে থেকে ঘন্টা বাকি আছে সো আমি মাটিতেই ঘুমাইতাছাড়া আমার একটা বাজে অভ্যাস আছেরামিশা জিজ্ঞেস করলো কি? আমার রাতে ঘুমের ঘরে গায়ে পা তুলে দেয়ার অভ্যাস আছেতাই ? হুম, রামিশা আথনুকে মুখে এর এই কথা শুনে প্রশ্ন করলো এর আগে কখনো কারো সাথে একই বিছানায় ঘুমাইছো ? না, তাহলে যে বললে গায়ে পা তুলে দেয়ার অভ্যাস আছে ? আথনু চুপ, রামিশার এই প্রশ্নে আথনু ধরা খেয়ে গেলরামিশা আবার প্রশ্ন করলো আমি বিধবা বলে তুমি আমার সাথে বিছানায় না শোয়ার জন্য এইটা বলেছো তাইনা ?  আথনু কিছুই বলল নাআথনুকের এর চুপ থাকা দেখে রামিশা মন খারাপ করে এক পাশ হয়ে শুয়ে পড়লোআথনু বিষয়টি বুঝতে পেরে রামিশার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।।



খুব শীগ্রই এই গল্পের (পার্ট-২৮) পোস্ট করা হবে এবং পার্ট-২৮ তে বিশেষ আকর্শন থাকবে


Coming soon will be posted (Part-28) of this story.



নোট: গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ!!




No comments:

Post a Comment