♥ আমার ভালবাসা বুঝলেনা
♥
আরিফ জামান
(পার্ট-২৫)
“কথায় আছে বিপদে বন্ধুর পরিচয়”
রনির বাবা বন্ধু না হলেও গাছের ছায়ার মতো মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ায় ঠিক তেমন টায় আমাদের
পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। অচেনা এক শহরে রাতের বেলা
রামিশাকে ভীষন চিন্তা হচ্ছিলো,
আমি একা হলে কোন সমস্যা ছিলনা কিন্তু
রামিশা
সাথে থাকার কারণে আরও বেশি চিন্তা হচ্ছিলো। আসলে দোষটা আমাদের, আমরা যদি সকালে বের হতাম তাহলে রাত হতো না। আমরা বাসা থেকে বের হতে অনেক দেরি করে ফেলেছি
তাই আমাদের রাস্তায় রাত হয়ে গিয়েছে।
রনিদের বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও তারপর যেতে হয়েছে
শুধু মাত্র রামিশার
সেফটির কথা চিন্তা করে। রনির বাবা ভালো মানুষ
না হলে এরকম কাউকে বাসায় নিয়ে আসে? আথনুক অবশ্য
পরিস্তিথী বুঝে চাচার কথায় রাজি হয়েছে।
আথনুকের মনে আরও বেশি বিশ্বাস এবং সাহস বেড়েছে যখন সে জানতে পেরেছে রনির বাবা চায়ের দোকানের মালিক।
আমি এবং
রামিশা যখন রনিদের বাসায় প্রবেশ করেছি তখন কারেন্ট ছিলো না। রনির বড় বোন আমাদেরকে একটা রুমে ঢুকে দিয়ে বলে গিয়েছে আপনারা
দুজন হাত মুখ ধুয়ে নিন আমি একটু পরে খাবার দিয়ে যাবো। রুমে প্রবেশ
করে আথনুক রামিশাকে বললো তুমি বাথরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নাও তারপর আমি যাবো। আথনুকের কথা মত রামিশা বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে আথনুককে বললো যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। আথনুক ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকে পড়লো।
রামিশা ভাবলো আথনুক মাত্র বাথরুমে ঢুকেছে বাথরুম থেকে বের হতে সময় লাগবে আমি এর মধ্যে নাইট ড্রেস টি পরে নেই।
আথনুক বাথরুমে ঢোকার পর তার মনে হয়েছে সে ফেসওয়াশ নিতে ভুলে গিয়েছে তাই সে
ফেসওয়াশ নেয়ার জন্য বাথরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু বাথরুমের দরজা খুলে
যে জিনিসটি আথনুকের চোখে
পড়লো তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
রামিশা গোলাপি কালারের একটা নাইট ড্রেস পড়ছে, পিছন থেকে তার ধব ধবে সাদা পিট টা দেখা যাচ্ছে।
আথনুক রামিশাকে এভাবে দেখে দ্রুত আবার বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দিলো। রামিশা আথনুককে এভাবে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসা দেখে দরজায় নক করে বললো কি ব্যাপার তুমি বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসলে কেন! হাত মুখ ধুবে না? আথনুক ভিতর থেকে বললো আমি ফেসওয়াশ নিতে ভুলে গিয়েছি আমার ব্যাগ থেকে ফেসওয়াশ টা দেও তো। রামিশা আথনুকের ব্যাগ থেকে ফেসওয়াশ বের করে দিলো।
আথনুক ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে একটু লজ্জা বোধ করছে।
আথনুক মাথা নিচু করে রামিশাকে “Sorry” বললো। রামিশা বিষয়টা বুঝেও না বোঝার ভান করে জিজ্ঞেস করলো Sorry বলছো কেন? আথনুক মাথা নিচু করে বলল আসলে আমি ইচ্ছে করে বাথরুম থেকে বের হই নাই, আমি ফেসওয়াশ নেয়ার জন্য বাথরুম থেকে বের হয়েছি।
রামিশা একটু অভিনয়ের ভংগিতে হেসে বললো আমি জানি তুমি ইচ্ছে করে বাথরুম থেকে বের হও নাই, তোমার জায়গায় আমিও হতে পারতাম So এটা কোনো ব্যাপার না! আথনুক এতক্ষনে মাথা উপরে তুলে রামিশাকে দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। রামিশা গোলাপি কালারের একটা নাইট ড্রেস পড়েছে, চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে,
চোখে কাজল
দিয়েছে, কপালে ছোট্ট
করে কালো একটা টিপ
দিয়েছে,
সবকিছু মিলিয়ে রামিশাকে অসাধারণ লাগছে। আথনুক রামিশার উপর থেকে কিছুতেই চোখ সরাতে পারছে না।
এর মধ্যে কারেন্ট চলে আসায় লাইটের আলোতে
রামিশাকে আরও বেশি সুন্দরী দেখাচ্ছে। আথনুক রামিশাকে দেখে এতোটাই মুখধো হয়েছে যে সে, মনের অজান্তেই বলে ফেললো তোমাকে অসাধারণ দেখাচ্ছে।
রামিশা কথাটা শুনেও না শুনার ভান করে বলল কিছু বললে নাকি? আথনুক কথা ঘুরিয়ে বলল রুম টা অনেক সুন্দর তাই না ? হুম।
আথনুক যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকে সে একাই তার রুমে ঘুমায়, সে আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের সাথে একই রুমে একই বিছানায় ঘুমায় নাই কিন্তু! আজকে জীবনের এই প্রথম বিবাহ ছাড়া একটা মেয়ের সাথে একই রুমে একই বিছানায় ঘুমাতে হবে। আথনুকের স্বপ্ন ছিলো ছায়াকে বিয়ে করে বাসর ঘরে ছায়াকে তার বিছানায় দেখবে কিন্তু সেটা আর হলো না।
এখানে রামিশার-ও কোনো দোষ নেই কারণ সে আমাকে সাহায্য করতে আমার সাথে এসেছে।
তাছাড়া আমরা দুজন আলাদা রুমে থাকতে পারবে না। প্রথম থেকে “করিম চাচাকে” বলে এসেছি আমরা দুজন স্বামী স্ত্রী। করিম চাচা কোন কারণে যদি জানতে পারেন আমরা দুজন স্বামী স্ত্রী নয় তাহলে ওনার মনে সন্দেহ হবে,
এবং আমাদের মতো এরকম বিপদ গামী মানুষের উপর থেকে তার বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে। করিম চাচা খুব নরম মনের মানুষ তাই কোন রকম ভ্যারিফাই ছাড়াই
তিনি আমাদেরকে রাত কাটানোর জন্য তার বাসায় আশ্রয় দিয়েছেন। করিম চাচা আজকে যেভাবে আমাদের বিপদে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আমাদের মতো লোক সেটা মোটেও করতে পারতো
না। করিম চাচার এই ব্যবহার দেখে বলতে বাধ্য হচ্ছি "কিছু মানুষের টাকা পয়সা থেকেও অসহায় মানুষকে সাহায্য করার ক্ষমতা থাকেনা”
“আর কিছু মানুষের টাকা পয়সা না থেকেও নরম মন দিয়ে অসহায় মানুষকে সাহায্য করেন”। যেমনটি আজ করিম চাচা আমাদেরকে আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করেছেন।
হঠাৎ
বাহির থেকে কে-যেন দরজায় নক করছে, রামিশা দরজা খুলতেই দেখলো করিম চাচার মেয়ে রিনা হাতে গ্লাস ও প্লেট নিয়ে দাড়িয়ে আছে। রামিশা খুলতেই রিনা রুমে প্রবেশ করে প্লেট আর গ্লাস জানালার পাশে রাখা পড়ার টেবিলের উপর রেখে চলে গেল এবং যাবার সময় বলে গেল আপনার হাত ধুয়ে নিন আমি খাবার নিয়ে আসতেছি।
রামিশা আথনুককে বলল এসো হাত ধুয়ে নাও। আথনুক টেবিলে বসার আগেই রিনা ট্রেতে করে খাবার নিয়ে এলো, রিনা ট্রে থেকে এক এক করে যখন খাবার গুলো নামিয়ে টেবিলের উপর রাখছিল আথনুক তখন লক্ষ করে দেখলো এত কম সময়ে মধ্যে করিম চাচা এতো খাবারের আয়োজন কিভাবে করেছে! আথনুক মনে কথা ধরে রাখতে না পেরে রিনাকে জিজ্ঞেস করেই বসলো, আপু এতো কম সময়ের মধ্যে আপনারা এতো কিছুর আয়োজন কিভাবে করলেন ? আর করিম চাচা কোথায় ? আব্বু বলেছেন আপনাদেরকে খেয়ে নিতে, আপনাদের খাওয়া শেষ হলে আব্বু আসবেন। করিম চাচা কে রেখে আমরা একা
কি করে খাই!আর তা
কি হয়? আপনি চাচা কে আসতে বলেন
আমরা একসাথে খাবো, আব্বুর এক জায়গায় দাওয়াত ছিল দোকান থেকে আসার সময় সেখান থেকে খেয়ে
এসেছেন। ও আচ্ছা!
আপনি খাবেন না? না! আমি পরে খাব, আপনারা খেয়ে নিন, পরে কেন আমাদের সাথে খান! না আমি
পরে খাব। রিনা রুম থেকে চলে
যাবার সময় রামিশাকে বলে গেলো “ভাবি আপনি ভাইয়াকে খাবার তুলে দিয়েন”,
রিনার মুখে ভাবী ডাক শুনে আথনুক একটু চমকে উঠলো, রামিশা মাথা নাড়িয়ে রিনাকে বললো আচ্ছা ঠিক আছে, আথনুক খাবারের মেনু দেখে অবাক হয়ে গেলো, ডান দিকে ছোট্ট বাটিতে ইলিশ মাছের ঝোল, লাল আলু দিয়ে গরুর মাংস রান্না করেছে, ছোট্ট দেশি মুরগি ভুনা করেছে, বেগুন গোল করে ভাজি করেছে, বিশেষ করে পোলাও আর ডিমের খোরমার ঘ্রাণে খাওয়ার আগে পেট ভরে গিয়েছে।
রামিশা আথনুকের প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে পাশে বসে রইলো, আথনুক রামিশাকে বললো কি ব্যাপার! তুমি আমাকে শুধু খাবার তুলে দিচ্ছ কিন্তু তুমি প্লেটে কিছু নিচ্ছ না কারণ কি? তুমি খাও আমি নিচ্ছি, রামিশা অনেক আদর করে আথনুককে রাতের খাবার খাওয়ালো। খাওয়া শেষে করিম চাচা রুমে এসে বললো
বাবাজি বেশি কিছু করতে পারি নাই, চাচা আপনি যে আয়োজন করেছেন এতে অনেক এর চেয়ে বেশি
কিছুর প্রয়োজন নেই। আচ্ছা বাবাজি তাহলে এখন ঘুমান কালকে কথা হবে,
আর রাতে কোন কিছুর প্রয়োজন হলে মামুনি-কে রীনাকে ডাক দিতে বলিয়েন, আচ্ছা চাচা। করিম চাচা রুম থেকে চলে যাবার
পর রামিশা দরজা লাগিয়ে দিল। আথনুক রামিশাকে বললো আমাকে একটা কাঁথা বালিশ ও চাদর দিন আমি মাঠিতে বিছানা করি, এই কথা শুনে রামিশা চমকে উঠলো, রামিশা প্রশ্ন করল আপনি মাটিতে ঘুমাবেন মানে? আমার সাথে আপনি একই বিছানায় শুলে আপনার পেস্টিস এ বাজবে তাই না ? রামিশা তুমি যা ভাবছো আসলে তা নয়, তাহলে কি ? শোনো! ম্যাচের কাঠি যেমন ম্যাচের সাথে থাকলে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে ঠিক! তেমনি আমাদের ও মধ্যে একই জিনিস হতে তাই আমাদের কে আলাদা বিছানায় ঘুমাতে হবে।
রামিশা এই কথা শুনে চুপ করে বিছানার এক পাশে শুয়ে রইলো।
আথনুক মাটিতে বিছানা করে শুয়ে পড়লো।
রাত প্রায় ১:৩০,
বৃষ্টির আওয়াজে রামিশার ঘুম ভেংগে গেল, রুমের জানালা খোলা থাকায় বাহির থেকে ঠান্ডা বাতাস রুমে প্রবেশ করছে, রামিশা বিছানা থেকে উঠে জানালার পাশে গিয়ে জানালা লাগিয়ে দিয়ে আথনুকের দিকে তাকালো। রামিশা আথনুকের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো, আথনুক-কে দেখে মনে হচ্ছে ফ্লোরে ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। রামিশা ভাবলো বৃষ্টির কারণে আথনুকের হয়তোবা ঠান্ডা লাগছে তাই সে নিজের গায়ের চাদরটা আথনুকের গায়ে জড়িয়ে দিতে গেল কিন্তু রামিশার
হাত আথনুকের গায়ে লাগতেই রামিশা অনুভব করলো আথনুকের গায়ে প্রচণ্ড জ্বর! এবং আথনুক ঠান্ডায় কাঁপছে, রামিশা এখন কি করবে বুঝতে পারছে না, বাহিরে ঝড় তুফানের কারণে করিম চাচাকে ডাকতে পারছে না। রামিশা কোন উপায় না দেখে মন-কে শক্ত করে আথনুক-কে বিছানার উপর তোলার চেষ্টা করলো
কিন্তু কোন মতেই তুলতে পারছেনা। কারণ জেগে থাকা মানুষকে কোলে তোলা যায় কিন্তু ঘুমের মানুষকে তোলা অসম্ভব!
আথনুক এতোটাই অসুস্থ হয়েছে যে তার কোনো হুস নাই! রামিশা অনেক কষ্ট করে আথনুক-কে বিছানায় তুলে শুয়ে দেয়ার সময় আথনুক রামিশা-কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
অনেকদিন পর হঠাৎ করে পুরুষের হাত তার গায়ে পড়াতে রামিশার গা শিউরে উঠলো।
রামিশা আথনুকের হাতটা ছেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই পারলো না। আথনুক তার মাথাটা রামিশার বুকে চেপে ধরে রেখে, আথনুকের শ্বাস প্রশ্বাস এতটাই ভারী হয়ে গিয়েছে যে রামিশার বুকে একটা অন্য রকম অনুভুতি হচ্ছে।
আথনুক তার ডান পা রামিশার দুই পায়ের মাঝখানে দিয়ে সাপের মত পেচিয়ে রেখেছে।
রামিশা হঠাৎ অনুভব করলো তার থাইয়ে শক্ত কিছু একটা জিনিস লাগছে।।
No comments:
Post a Comment