♥আমার ভালবাসা বুঝলেনা ♥

আরিফ জামান(পার্ট-২২)

ছায়া রবিনকে বিয়ে করছে শুনে আথনুক মোটেও মন খারাপ করে নাই কারণ আথনুক ভালো করে জানে ভালোবাসা একতরফা হয় না ভালোবাসার জন্য দুটি মনের মিল হওয়া খুবই জরুরি। ছায়া যদিও রবিন এবং তার ভালোবাসার কথা আথনুকের কাছে গোপন রেখেছিল কিন্তু তারপরও আথনুক ছায়ার উপর রাগ করে নাই বরং ছায়ার উপর আথনুকের ভালোবাসা আরও বেড়ে গিয়েছে। পৃথিবীতে আব্বু আম্মু না থাকলে একটি মেয়ে কত বড় অসহায়  হতে পারে আথনুক আজ ছায়ার চিঠি পড়ে সেটা বুঝতে পারলো। ছায়া শুধু তাই নয়! ছায়া তার মনে এতো কষ্ট লুকিয়ে রেখেছে আজ রামিশা যদি ছায়ার চিঠি আথনুককে না দিত তাহলে আথনুক হয়তোবা কখনই বুঝতে পারতোনা। আথনুক যখন ছায়ার চিঠি পড়ছিলো তখন তার বুক ফেটে কান্না আসছিলো। ছায়ার লেখা চিঠির প্রতিটি লাইনে তার কষ্ট গুলো বার বার আথনুকের চোখে ভেসে উঠছে। আথনুক যখন ছায়াকে এসএমএস করে I Love You বলেছিলো তখন তার ধৈর্য শক্তি এতই কম ছিল যে এসএমএস  এর উত্তরের আশায় সে একটু পর পর মোবাইলের দিকে তাকিয়ে সারা রাত কাটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যদি ধৈর্য শক্তির কথা বলা হয় তাহলে আথনুক আজকে ছায়ার ধৈর্য শক্তির কাছে হেরে গিয়েছে।

আথনুক ছায়ার লেখা চিঠিটা বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। জানালার পাশে একটি নারিকেল গাছে অনেক গুলো বাবুই পাখি চেচামেচি করছে। এদের মধ্যে দুটি পাখি একটি নারিকেল পাতার শেষ প্রান্তে অতি যতনে তাদের বাসা বানাচ্ছে। বাবুই পাখি দুটির বাসা বানানো দেখে আথনুক মনে মনে ভাবছে এই বাবুই পাখি দুটির মতো আজকে ছায়া রবিনের সাথে অটুট বন্ধনে নিজেকে বাঁধছে। পেছন থেকে কেউ একজন মেয়েলি কণ্ঠে বলছে “বাবুই পাখি দুটির মতো আপনার আর ছায়ার একই ছাদের নিচে যদি ছোট্ট একটি ভালোবাসার নীড় হতো তাহলে কতই না ভালো হতো” কিন্তু দুঃখের বিষয় ছায়া আপনার ভালোবাসা বুঝতে পারলোনা। আথনুক বাবুই পাখি দুটির উপর এতই মগ্ন হয়েছিল যে, সে বুঝতেই পারে নাই রামিশা কখন রুমে ঢুকে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আথনুক পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো রামিশা বিড় বিড় করে কি যেন বলছে, আর ছায়ার বদনাম করছে। আথনুক রামিশাকে দেখে বলল আপনি নিশ্চয় ভেবেছিলেন আমি ছায়ার চিঠি পড়ে মন খারাপ করে অসুস্থ হয়ে পরবো তাইনা? রামিশা উত্তরে সঠিক জবাব না দিয়ে একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে জবাব দিলো। রামিশা বলল হুম একটু চিন্তা হচ্ছিলো, আপনি ছায়ার চিন্তায় অসুস্থ হয়ে যান কিনা। কারণ আজকাল কের ছেলে মেয়েরা প্রেম করার পর যদি কোনো কারণে ছেকা খায় বা ছেড়ে চলে যায় তাহলে নীরবে চোখের জল ঝড়ায় এবং প্রেমিক/প্রেমিকা একে অপরকে ভুলে যাওয়ার জন্য কতই না অপকর্ম করে। একে অপরকে অভিশাপ দেয় কিন্তু! আপনি দেখছি এসব কিছু না করে বরং জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাবুই পাখির বাসা বানানোর দৃশ্য অনুভব করে মজা নিচ্ছেন।

আথনুক লম্বা করে একটা নিশ্বাস নিয়ে রামিশাকে বললো দেখেন! ছায়া আমাকে ভালবাসে নাই তো কি হয়েছে আমি তো তাকে মন থেকে ভালবেসেছি। আমি ছায়াকে ভালোবাসলে ছায়া আমাকে ভালোবাসতে হবে এটা কোথাও লেখা নাই। এখানে পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার আছে। ছায়াকে আমার পছন্দ হয়েছে আমি ওকে ভালোবেসেছি। ছায়ার আমাকে পছন্দ হয় নাই তাই সে আমাকে ভালোবাসে নাই। তাছাড়া ছায়া পরিস্থিতির শিকার হয়ে সে রবিন কে বিয়ে করছে। ছায়া যে পরিস্থিতি পরিবেশে কষ্ট করে নিজের কষ্ট বুকে চেপে রেখে সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলে দিন পার করেছে ওর জায়গায় আমি হলে অনেক আগেই হার মানতাম। আমি মনে করি ছায়া রবিনকে বিয়ে করে কোনো অপরাধ করে নাই। আর এর জন্য ছায়ার উপর আমার বিন্দু মাত্র রাগ হয় নাই। বরং ছায়ার উপর আমার ভালোবাসা আরো বেড়ে গিয়েছে। রামিশা আথনুকের মুখে ছায়ার কথা শুনে লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে বললো তাহলে এখন ছায়াকে ভুলে গিয়ে আন্টি বলেন ভালো একটা মেয়ে দেকে আপনাকে বিয়ে দিতে আর তাকে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেন। রামিশার কথা শুনে আথনুক তার হাসি ধরে রাখতে পারলোনা।

আথনুক হাসতে হাসতে রামিশাকে বললো “কাউকে মন থেকে ভালোবাসা যায়, ভোলা যায় না” তাই আমিও ছায়াকে কোন দিন ভুলতে পারবোনা। তাহলে আপনি কি এখন ছায়াকে না ভুলে সারাজীবন তার স্মৃতি বুকে নিয়ে বেঁচে থাকবেন? অবশ্যই! শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তার স্মৃতি বুকে নিয়ে বেঁচে থাকবো। তবে তার আগে ছায়া এবং রবিনের বিয়ে খেতে যাবো। What! এসব কি বলছেন আপনি, আপনার মাথা ঠিক আছেতো? হুম আমার মাথা সম্পূর্ণ ঠিক আছে। তাছাড়া ছায়াকে ভালোবেসে বিয়ে করতে পারিনি তো কি হয়েছে সামনে দাঁড়িয়ে থেকে তার বিয়ে তো দেখতে পারবো। আপনি ছায়াকে দেখে ঠিক থাকতে পারবেন? জানি কষ্ট হবে, কিন্তু আমি নিজেকে ঠিক সামলে নিতে পারবো। যদি তাই হয় তাহলে আমিও আপনার সাথে যাবো কারণ আমিও দেখতে চাই “একজন প্রেমিক কিভাবে সামনে দাঁড়িয়ে থেকে তার প্রেমিকাকে অন্যের হাতে তুলে দিতে পারে”। মজা করছেন? মজা না, আমি সত্যি বলছি আমি আপনার সাথে যাবো। ঠিক আছে তাহলে আপনি মানুষিক ভাবে প্রস্তুতি নিন আমরা আগামীকাল সকালে ছায়ার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিবো।।

খুব শীগ্রই এই গল্পের (পার্ট-২৩) পোস্ট করা হবে এবং পার্ট-২৩ তে বিশেষ আকর্শন থাকবে।

Coming soon will be posted (Part-23) of this story. 

নোট: গল্প কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ!!